প্রসুতির লজ্জাস্থানে সুইচ রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ হাবিবুল্লাহ মিঠূ, উপজেলা প্রতিনিধি নেছারবাদ- পিরোজপুর
প্রকাশিত: সোমবার ২২শে এপ্রিল ২০১৯ ১১:৩২ পূর্বাহ্ন
প্রসুতির লজ্জাস্থানে সুইচ রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ

নেছারাবাদে নার্সের অবহেলায় প্রসুতির গোপনাঙ্গে ভাঙ্গা সুইচ রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স গৌরির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রোগী নার্স গৌরি ও সুমিত্রাকে দায়ি করে বিচার চেয়ে অত্র হাসপাতালের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন। গত ৫ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ষ্টাফ নার্স গৌরি ও সুমিত্রার খাম খেয়ালিপনায় হাসপাতালে বসে রোগীর ডেলিভারিতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার এক মাসেরও বেশি সময় অতিক্রম হওয়ার পরে গত ১৭ এপ্রিল উপজেলার একটি বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিকের নার্সের অস্ত্রপাচারে ঘটনাটি ধরা পরেছে। বেসরকারি ক্লিনিকটির ওই নার্স দরদ্রি প্রসুতির সেলাই করা লজ্জাস্থানে অস্ত্রোপাচার করে ভাঙ্গা সুইচটি বের করেছেন। সরকারি হাসপাতালের গৌরির অবহেলাজনিত চিকিৎসায় বর্তমানে সনিয়া বেগম(২৬) নামে ওই প্রসুতি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে রয়েছেন। তবে অভিযোগ অনেকটা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নার্স গৌরি।

দরিদ্র প্রসুতি সনিয়া বেগম অভিযোগে জানান, সে একজন অতি দরিদ্র ঘরের গৃহ বধূ। মৃত বাবার ঘরে এক মাত্র তার বৃদ্ধ দরিদ্র মা ও অসুস্থ বড় ভাই রয়েছেন। গত ৪মার্চ সন্তান প্রসবের জন্য সনিয়া উপজেলর নেছারাবাদ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন ৫ মার্চ ২০১৯ ইং তারিখে হাসপাতালের নার্স গৌরির ও সুমিত্রার তত্ত্ববাদয়নে সনিয়ার নরমাল ডেলিভারিতে কোল জুড়ে একটি মেয়ে সন্তান আসে। তখন নাসর্রা ডেলিভারিতে কাটা ছেড়া করে। সন্তান প্রশবের পর কাটাস্থানে সেলাই করার সময় সুইচ ভেঙ্গে সেলাইয়ের ভিতরে রয়ে যায়। পরে সনিয়া হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকেই তার সেলাইয়ের জায়গায় ক্রমেই ব্যাথা বাড়তে থাকে। এতে সে ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সনিয়া এ নিয়ে অত্র হাসপাতালের ডাক্তার আসাদুজ্জামানের কাছে একাধিক বার এসে চিকিৎসা করিয়ে তার দেওয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ি ওষুধ সেবন করলেও সে কোনভাবেই সুস্থ হচ্ছিলেননা। তার সেলাইয়ের জায়গা থেকে দাগ দিয়ে ফুলে উঠে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। সর্বশেষ নিরুপায় হয়ে সে স্থানীয় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে সমস্যার কথা বলেন। সেখানকার ক্লিনিকের চিৎসক তার সেলাইয়ের জায়গায় একটি ক্ষুদ্র অস্ত্রপাচার করে সেখান থেকে ভাঙ্গা সুইচটি বের করেন।

অভিযুক্ত নার্স গৌরি বলেন, ওই দিন হাসপাতালে সনিয়ার ডেলিভারিটি তিনি করেছেন। তবে অনাকাঙ্খিতভাবে সনিয়ার সেলাইস্থানে সুইচ ভেঙ্গ থেকে যেতে পারে। কিন্তু ঘটনা যদি তাই ঘটেই থাকে তাহলে গৃহবধূ সনিয়া কেন তার সাথে যোগাযোগ করেননি। এজন্য বিষয়টি তিনি ষড়যন্ত্রমুলক বলে দাবী করছেন। তবে অভিযোগকারি সনিয়া বলেন, নার্স গৌরি ভালভাবে তার ডেলিভারি করার পরিবর্তে কোন রকমে চিকিৎসা দিয়ে তার কাছ থেকে ১৪০০টাকা বকশিষ রেখেছেন। ডেলিভারির পর সে(সনিয়া) শরীরের অসুস্থতার কথা নার্স গৌরিকে জানানোর জন্য বার বার হাসপাতালে আসলেও তাকে খুজে পাওয়া যায়নি। 

হাসপাতালের ডাক্তার আসাদুজ্জামান জানান, গৌরির কাছ থেকে শুনেছি তার ডেলিভারিটি হাসপাতালের নার্স গৌরি ও সুমিত্রা করেছিলেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য একবার আলোচনায় বসা হয়েছিল। উভয় পক্ষকে ডেকে বিষয়টি জেনে এখনো সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে অত্র হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ তানভীর আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি আমি প্রথমে হাসপাতালের ডাক্তার আসাদুজ্জামান ও অভিযুক্ত নার্স গৌরি কাছ থেকে শুনেছি। এ নিয়ে আমার অবর্তমানে ডাক্তার আসাদুজ্জামান ওই অভিযোগকারি সনিয়ার পরিবারের লোকদের নিয়ে একবার আলোচনার জন্য হাসপাতালে বসেছিলেন। এ ব্যাপারে ওই রোগী আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একটি তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি করে রিপোর্ট প্রদানের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

ইনিউজ ৭১/এম.আর