ইন্দুরকানীতে শ্রমীক লীগ নেতা ও ইউপি সদস্যদের উপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৬ই এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৩৬ অপরাহ্ন
ইন্দুরকানীতে শ্রমীক লীগ নেতা ও ইউপি সদস্যদের উপর হামলা

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে গৃহবধূকে উত্ত্যক্ত ও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির প্রতিবাদ করায় স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে ইউনিয়ন শ্রমীক লীগের সাবেক সভাপতি ও এক ইউপি সদস্যদের উপর হামলা, বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার গভীর রাতে থানায় জিডি করে দুজন বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বটতলা বাজারে মটর সাইকেল থামিয়ে হামলার পর ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াকুব আলী হাওলাদারের বাসাবাড়িতে ঢুকে ভাংচুর চালানো হয়। ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ইন্দুরকানী থানা পুলিশ। এদিকে আহত ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী হাওলাদার ও বালিপাড়া ইউনিয়ন শ্রমীক লীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর সেপাইকে সকালে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গেলে আহত ইয়াকুব আলী ও আলমগীর সেপাই জানান ,গত ১৪ এপ্রিল নববর্ষের দিন দুপুরে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের সোহাগ সেখের বাড়িতে তার শ্যালক ও শ্যালিকা বেড়াতে আসলে বালিপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ শামীমের নেতৃত্বে স্থানীয় ১০/১২ জন যুবক বহিরাগত ভেবে তাদের পিছু নিয়ে ঐ বাড়িতে গিয়ে শ্যালক শ্যালিকাসহ সোহাগ সেখের স্ত্রী রাজিয়া বেগমকে উত্ত্যক্ত করে এবং ঐ বাসার সাবিনা আক্তার নামে আরেক গৃহবধূর গায়ে হাত তুলে তার সাথে অশোভন আচারন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক পর্যায়ে সবার মান সম্মান নস্ট করার ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন যুবলীগ নেতা শামীম ও তার লোকজন।

পরে এ ঘটনা স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী হাওলাদারের কাছে জানালে তিনি ও শ্রমীক লীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর সেপাই ঘটনার পরের দিন সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে বালিপাড়া বাজারে শামীমের সহয়োগীদের কাছে জিঞ্জেস করলে তারা ঐ ইউপি সদস্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এসময় যুবলীগ নেতা শামীম এসে ইউপি সদস্যকে লাি ত করেন। এসময় আলমগীর সেপাই প্রতিবাদ করলে তাকেও হুমকি দেন। এঘটনায় ঐ রাতেই থানায় শেখ শামীম সহ ৪/৫ জনের নাম উল্লেখ করে আলমগীর সেপাই বাদি হয়ে একটি সাধারন ডায়রী করেন। পরে থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে আনুমানিক রাত ১২টার দিকে বটতলা বাজারে আগে থেকে ওৎপেতে থাকা শেখ শামীমের নেতৃত্বে ১৫/১৬ জনের একটি দল তাদের মটর সাইকেলের গতি রোধ করে পেটানো শুরু করলে আলমগীর সেপাই দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রায় নেয়।

পরে ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী হাওলাদারকে জিম্মি করে রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে তাকে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যান শেখ শামীম ও তার লোকজন। এসময় তার বাসায় ঢুকে ঘরের আসবাব পত্র সহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর করে। এছাড়া  আলমীরা ভেঙ্গে নগদ দেড় লাখ টাকা, ৭/৮ ভরি স্বর্ণালংকার এবং দুটি স্যামসাং এন্ড্রয়েড মোবাইল সেট সহ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যান বলে আহত ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী জানান। এসময় আশপাশের লোকজন টের পেলে দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে আহত ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী ও আলমগীর সেপাইকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে স্বজনরা।

এ ব্যাপারে গৃহবধূ রাজিয়া বেগম অভিযোগ করে জানান, নববর্ষের দিন ১০/১২ জন যুবক এসে আমাদের বাসার মহিলাদের সাথে অশোভন আচারন করেন এবং ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আহত ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী জানান, আমাকে রাতে মারধর করে জিম্মি করে আমার বাড়িতে এসে ঘরের ভিতর ঢুকে ভাংচুর করে এবং প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এব্যাপারে বালিপাড়া ইউনিয়ান যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সেখ শামিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের এক বাড়িতে সন্দেহ ভাজন দুটি ছেলে মেয়ের বেড়াতে আসা নিয়ে স্থানীয় কিছু যুবকের সাথে কথার কাটাকাটি হলে থানায় জিডি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার রাতে বটতলা বাজারে ঐ যুবকরা পথ আগলে ইয়াকুব ও আলমগীরকে চড় থাপ্পর মারে। তবে এ ঘটনার সময় আমি ওখানে উপস্থিত ছিলামনা।

 এমনকি উথÍাপিত এসব অভিযোগ বা ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। একটি মহল আমাকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে ব্যার্থ হয়ে আমার নামে বিভিন্ন ভাবে দুর্নাম করছে। ইন্দুরকানী থানার ওসি মোঃ হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাতে একদল যুবক বটতলা বাজারে ইউপি সদস্য সহ দুজনকে মারধর করে। তবে ঐ ঘটনার পর ইউপি সদস্যের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়ে কতটা সত্যতা আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ঐ রাতের ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি বলে তিনি জানান।

ইনিউজ ৭১/এম.আর