রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএর বহুতল ভবন ভাঙার কাজ আজ শুরু হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন লাইনসহ সব ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোগ বিচ্ছিন্নের মাধ্যমে এ কাজ শুরু করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর ভবনের সামনে রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি ভবন ভাঙার গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবশেষ ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবনটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে সময় দিয়েছিলেন আদালত। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নামছে রাজউক।
এ বিষয়ে রাজউক সূত্র জানায়, ভবনটি ভাঙতে বিজিএমইএকে দেয়া সময় পার হওয়ার পরই এটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভবনটি ভাঙতে রাজউক সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে বিজিএমইএ ভবনের সামনে উপস্থিত রাজউকের কর্মকর্তারা জানান। এ ছাড়া ভবন থেকে মালামাল সরাতে অফিস মালিকদের স্বল্প সময় দেয়া হতে পারে। এর পরই মূল ভবন ভাঙার কাজ শুরু হবে। এর আগে সোমবার গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার থেকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ আইনি জটিলতার অবসান শেষে আমরা উচ্চ আদালত কর্তৃক নতুন করে কোনো প্রকার সময় বৃদ্ধি বা ভবন ভাঙা কার্যক্রম স্থগিত রাখতে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করছি।
‘বিজিএমইএ ভবন’ অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয়েছে গত ১২ এপ্রিল। গত বছরের ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএকে এক বছর ১০ দিন সময় দেন। রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে আদালত যদি আর সময় না দেন, তা হলে আমরা ভবনটি ভেঙে ফেলব। এ বিষয়ে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। এ বিষয়ে করা রিটের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাতিরঝিলে খালের ওপর নির্মিত বহুতল ভবন অপসারণে বিজিএমইএকে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয়েছে গত শুক্রবার। ইতিমধ্যে বিজিএমইএ ভবন থেকে তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করছে বলে শুনেছি। বিজিএমইএর পক্ষে ভবন ভাঙার বিষয়ে আরও সময় চাওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে তারা আর সময় চায়নি।
জলাধার আইন ভেঙে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে ‘একটি ক্যান্সার’ বলেছিল হাইকোর্ট। ওই ভবন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপিলেও বহাল থাকে। পরে বিজিএমইএ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। ভবনটি টিকিয়ে রাখতে বিজিএমইএ নেতারা বহু চেষ্টা করেছেন। দীর্ঘ আট বছর মামলা লড়ে পরাজিত হন তারা। ভবনটি সরাতে একাধিকবার সময় নেয় বিজিএমইএ। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫০ শতাংশ কমমূল্যে উত্তরার ১৭নং সেক্টরে ১১০ কাঠা জমির ওপর ১৩তলা ভবন নির্মিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে নতুন এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৬ তলার নির্মাণকাজ শেষ হওয়া ভবনটির পুরো কাজ শেষ হতে পারে ২০২০ সালের জুনে। তবে কয়েকটি তলার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় ও আদালতের বাধ্যবাধকতা থাকায় চলতি মাসেই বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় উত্তরায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।