বাংলাদেশের গত জাতীয় নির্বাচনকে ‘পক্ষপাতমূলক’ আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপরে প্রস্তুত দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটিতে নির্বাচনকেন্দ্রিক ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ থাকার দাবি করা হয়েছে। নির্বাচন ছাড়াও বাংলাদেশের বিষয়ে প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, বাক স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া, দুর্নীতি এবং এনজিও বিষয়ক আইনে থাকা ‘অতিরিক্ত কড়াকড়িকে’ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতি বছর মার্কিন কংগ্রেসের কাছে বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে, যাতে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও শ্রম অধিকার সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরা হয়। বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং এতে উপস্থাপিত তথ্য মার্কিন কংগ্রেস, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ প্রামাণিক হিসেবে গ্রহণ করে। কোনও দেশকে সহায়তা দেওয়া না দেওয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর করা না করার মতো বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়।
বুধবার (১৩ মার্চ) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উপস্থাপন করা প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘হয়রানি, ভয়ভীতি, নির্বিচার গ্রেফতার এবং সহিংসতার কারণে বিরোধী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণা চালানো বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।’ প্রতিবেদনের ভাষ্য, বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসন নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ওপর যথেষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পেরেছে। কিন্তু একইসঙ্গে তাদের দেওয়া হয়েছে ব্যাপক মাত্রার দায়মুক্তি। ‘নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও তাদের দ্বারা সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের তদন্ত ও দায়িদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার খুব কম পদক্ষেপই গ্রহণ করেছে।’
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম ও কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তৎপরতা বাড়ানোর ফল হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্প খাতের কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মপরিবেশ উন্নতিতে অগ্রগতি হয়েছে। তবে এখনও ‘কমপ্লায়েন্স’ মেনে চলার ক্ষেত্রে পরিদর্শনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অপ্রতুল। যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় বিধি ভঙ্গের প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে না। ‘সরকার নূন্যতম মজুরি, কর্মঘন্টা নির্ধারণ, কর্মস্থলে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবার মতো বিষয়গুলো কার্যকরভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি।’বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি উল্লেখ করে পম্পেও বিশেষভাবে চীন ও ইরানের নাম উল্লেখ করেন। উইঘুর নিপীড়ন প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনে চীন অন্য যে কারওর চেয়ে এগিয়ে।’ ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ‘চরম খারাপ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
পম্পেও আরও বলেছেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ নিশ্চিতে সব সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার নীতিতে মেনে চলছে মার্কিন প্রশাসন। তার ভাষ্য, ‘তবে বহু শক্তিশালী ও সার্বভৌম দেশ থাকা এ বিশ্ব টেকসই স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের মার্কিন স্বার্থ তখনই নিশ্চিত হবে যখন সরকারগুলো মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেবে।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।