নরসিংদীর পলাশে বাসায় কাজে নিয়ে মুঠোফোন চুরির অপবাদ দিয়ে দিনমজুর তিন কিশোরের ওপর অমানুবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাফিজ আহম্মেদ নামে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। হাফিজ আহাম্মেদ কিশোরদের নিজের রুমে বন্দি করে রড দিয়ে পিটিয়ে তাদের কাছ থেকে মুঠোফোন চুরির স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে মুঠোফোনের ক্ষতিপুরণ হিসেবে পরিবারদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও জানা গেছে। গত রোববার সন্ধ্যায় পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক এলাকায় এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নির্যাতিত ইব্রহিম নামে এক দিন মজুর (কিশোর) পলাশ থানায় হাফিজ আহাম্মেদের বিরুদ্ধে একটি লিখেত অভিযোগ দায়ের করেন। হাফিজ আহাম্মেদ ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫ নং ইউনিটের ইলেক্ট্রিক্যাল ফোরম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন।
নির্যাতিত দিনমজুর কিশোররা হলেন, পলাশ বাজারে বসবাসরত ইদ্রিস আলীর ছেলে ইব্রাহিম (১৯) , কামাল মিয়ার ছেলে সোহেল (১৮) ও আবু তাহেরের ছেলে কাউছার (১৮)। তারা বিভিন্ন সময় বাসাবাড়ির মালামাল উঠা-নামাসহ দিনমজুরের কাজ করেন। নির্যাতিত কিশোর ইব্রাহিম জানান, রোববার হাফিজ ফোরম্যানের বাসার মালামাল পলাশ ২৫/৫১ নং থেকে প্রভাতি ৩/৩২ নম্বর বাসায় নেওয়ার কাজ করি। সারাদিন মালামাল আনা নেওয়ার কাজ শেষে সন্ধ্যায় মজুরি নিতে গেলে হাফিজ আহাম্মেদ আমাদের বিরুদ্ধে একটি মুঠোফোন চুরির অভিযোগ তুলেন। মুঠোফোনটি আমাদের কেউ নেইনি জানাইলে তিনি আমাদের চোরের বাচ্চা বলে গালি দিয়ে আমাকেসহ সোহেল ও কাউছারকে একটি রুমে বন্দি করে রাখে। কিছুক্ষণ পর তিনি আরো তিনজন লোক এনে আমাদের রশি দিয়ে বেধে মুঠোফোন বের করে দেওয়ার কথা বলে বলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রড দিয়ে পিটাতে থাকে।
আমরা কোনো মুঠোফোন নেইনি বললেও তিনি আমাদের কোনো কথা শুনেননি। একপর্যায়ে আমাদের পরিবারের কাছে খবর দিয়ে মুঠোফোনের ক্ষতিপুরণ নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়। ইব্রাহিমের পিতা ইদ্রিস আলী জানায়, চুরির অপবাদে মারধরের বিষয়টি শুনে হাফিজ ফোরম্যানের কাছে গেলে তিনি মুঠোফোনের ক্ষতিপুরণ বাবদ ৫০ হাজার টাকা চান। তা না হলে তাদের পুলিশে দিয়ে দিবে। পরে বিভিন্ন স্থানে ধারকর্য করে টাকা দিয়ে আহত অবস্থায় তাদের ছাড়িয়ে এনে স্থানীয় স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করি। সামান্য একটি মুঠোফোনের জন্য মানুষ এমন অমানুবিক ভাবে নির্যাতন করতে পারে তা আগে কখনো দেখিনি। নির্যাতনের বিচার চেয়ে প্রথমে স্থানীয় মানবাধিকারের সরাপর্ন হই। একপর্যায়ে মানবাধিকার সংস্থার সহযোগীতা নিয়ে থানায় মামলা করি। এদিকে নির্যাতনের বিষয়ে হাফিজ আহাম্মেদ সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাদের কোনো শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। শুধু মুঠোফোনটি নেওয়ার বিষয়টি জিজ্ঞাস করা হয়েছে। এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পলাশ থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা জানান, নির্যাতিত কিশোরের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।