যাত্রাবাড়ী-ডেমরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নতীকরণসহ আটটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। আজ মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) একনেক এর প্রথম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৯৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে এই প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করা হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারন অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘একটাই লক্ষ্যে গতি বৃদ্ধি করা। উন্নয়নের পথে আমরা সবাই তীর্থ যাত্রী। তাই সবাই মিলেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমার একটাই লক্ষ্য হচ্ছে গতি বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য যে গতি ছিল তা বাড়ানো হবে।’ মন্ত্রী আরো বলেন, ‘জনগণের অর্থ খরচে সবসময় সাবধানতা বজায় রাখবো। প্রয়োজন ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত খরচ করবো না।’ অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে পিপিআর রোগ নিমূল এবং ক্ষুরারোগে নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৪৫ কোটি টাকা। দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ মূল্যেও অপ্রধান শস্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মসূচি প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিদ্যমান ৭টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন ও নতুন ৬টি টেক্সটাইল ভোকেশনার ইনস্টিস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর ভবন সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। যাত্রাবাড়ী ( মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার)-ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৬৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। নেত্রকোণা জেলার চল্লিশা (বাগড়া)-কুনিয়া-মেদনী-রাজুরবাজার সংযোগ মহাসড়ক নির্মান প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৫৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। গোবিন্দগঞ্জ –ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কে বিদ্যমান ৯টি সরু ও জরাজীর্ণ সেতুর স্থলে ৯টি আরসিসি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
ব্রিফিং এ আরো জানানো হয়, যাত্রাবাড়ী ( মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার)-ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৬৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-শিমরাইল-নারায়নগঞ্জ সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যা দুটি প্রধান জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কে সংযুক্ত করেছে। প্রস্তাবিত সড়কাংশটি আগে থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মূল অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কাচঁপুর সেতু ও পোল্ডার সড়ক নির্মাণের ফলে সড়কের এই অংশ থেকে নতুন সড়কে যান চলাচল বেড়ে যায়। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর অংশটি বর্তমানে ৮ লেন বিশিষ্ট মহাসড়ক যেখানে দেশের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকল যান এসে মিলিত হয়। ফলে এই এলাকায় নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি হয়।
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এর টোলের কারণে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়কাংশে যান চলাচলের অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া,সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সংখ্যক বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আশেপাশে গড়ে ওঠায় যান চলাচলের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। কাচঁপুর সেতুর যানজট এড়ানোর জন্য সিলেট থেকে আগত যানবাহন তারাবো-যাত্রাবাড়ী সড়কাংশ ব্যবহার করে। ঢাকা-ডেমরা-শিমাইল সড়কের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার এবং বিদ্যমান প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার। তাই প্রকল্পের আওতায় এই সড়কটি ১৫ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থে ৪ লেন সড়ক হিসাবে নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া ধীরগতির যান চলাচলের জন্য প্রস্তাবিত মূল চারলেন সড়কের উভয় পাশে দুই লেন বিশিষ্ট আলাদা সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। সড়কটি উন্নয়ন করা হলে স্থানীয় যানবাহন ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পারাপার থেকে বিরত থাকবে এবং দুঘর্টনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়াসহ যানজটের তীব্রতা অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে একনেক বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে মন্ত্রীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়া প্রতিটি প্রকল্পের সর্বোচ্চ মান রক্ষায় পরিকল্পনা কমিশনকে কড়া নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।