গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর বিষয়টি বিশ্বজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দেওয়া এই ঐতিহাসিক রায়টি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আল জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসসহ প্রায় সব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খবরটি প্রধান শিরোনাম হিসেবে প্রচার করে।
বিবিসি শিরোনাম দেয়— “সাবেক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নৃশংস উপায়ে বিক্ষোভ দমনে দায়ী করে মৃত্যুদণ্ড”। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শতাধিক হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ভারতে নির্বাসনে থাকায় হাসিনার অনুপস্থিতিতেই বিচার সম্পন্ন হয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, “ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। ছাত্র প্রতিবাদ দমনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।” প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তিন বিচারকের বিশেষ প্যানেল প্রমাণ পেয়েছে যে হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘বৃহৎ মাত্রার দমন-পীড়নে উৎসাহিত করেছিলেন’।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে এত বড় আইনি পদক্ষেপ আর নেওয়া হয়নি। প্রতিবেদনটিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রায়ের প্রভাব সম্পর্কেও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এএফপি জানায়, বিচারক গোলাম মর্তূজা মজুমদার রায় পড়ার সময় বলেন—“হাসিনাকে তিনটি অভিযোগে দোষী প্রমাণিত করা হয়েছে: হত্যায় উসকানি, হত্যার নির্দেশ প্রদান এবং নৃশংসতা ঠেকাতে ব্যর্থতা।” বিচারক জানান, “আমরা তাকে একটি মাত্র দণ্ড দিচ্ছি—মৃত্যুদণ্ড।”
রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানায়, “এটি দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে নাটকীয় অধ্যায়। ছাত্র আন্দোলন দমনে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।”
আল জাজিরা শিরোনাম করে— “বাংলাদেশের হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত।” তারা জানায়, গত বছরের ছাত্র নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ভারতের দ্য হিন্দু ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদে উল্লেখ করে যে এ রায়ই ছিল হাসিনা সরকারের পতনের অন্যতম কারণ। পাকিস্তানের দ্য ডন ও জিও নিউজ এএফপি ও রয়টার্সের অনুসরণে একই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি জানায়, “পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড।” তারা উল্লেখ করে, ২০২৪ সালের আগস্টে ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘটিত সহিংসতায় ১৪০০–এর বেশি মানুষ মারা যায়, যা আদালত গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করেছে।