প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ২০:৩৩
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করতে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ন্যায়বিচার কেবল শাস্তি নয়, বরং একটি এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করা, যেখানে ক্ষমতা আর কখনও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না।
জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় ইউনূস বলেন, গত বছরের জুলাই বিপ্লব ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সেই সময় তরুণরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেশের ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করেছে। এই সাহস ও আত্মত্যাগ গোটা মানবজাতির পক্ষেও অনন্য এক বার্তা বহন করে।
তিনি জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার প্রশংসা করে বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট কিংবা ২০২৪ সালের সহিংসতার সময়ও জাতিসংঘ সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউনূস জানান, গত বছরের জুলাই থেকে আগস্টে প্রায় ১,৪০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এই সহিংসতা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পরিচালিত। এমন অপরাধ শুধু নিন্দনীয়ই নয়, মানবতা বিরোধী অপরাধ বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন ন্যায়বিচার ও আত্মশুদ্ধির জন্য জরুরি। আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিবিসি ও আল জাজিরার প্রতিবেদনও এই তদন্তকে সমর্থন করেছে।
সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, গুমের শিকারদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক কনভেনশনে অংশগ্রহণ, দণ্ডবিধি সংশোধন এবং জাতিসংঘের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ইতোমধ্যে হয়েছে। ঢাকায় একটি সহায়তাকারী মিশন গঠনের উদ্যোগও চলছে।
তিনি জানান, সরকার একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং মানবিক মূল্যবোধভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যারা জীবনের বিনিময়ে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখিয়েছেন, তাদের স্মরণ করাই আমাদের দায়িত্ব। তাদের আত্মত্যাগেই জন্ম নিচ্ছে একটি নতুন বাংলাদেশ।