আসাদের পতনের পর সিরিয়ার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করছে ইইউ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:০০ পূর্বাহ্ন
আসাদের পতনের পর সিরিয়ার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করছে ইইউ

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির ব্যাংকিং, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। সিরিয়ার নতুন শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য, তবে ইউরোপের দেশগুলো ইসলামপন্থি নেতৃত্বের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে শঙ্কিত ছিল। অবশেষে ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হবে।  

গত মাসে ইউরোপীয় ব্লক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল, যা এখন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। তবে কূটনীতিকরা সতর্ক করেছেন, যদি সিরিয়ার নতুন সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাহলে নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা হতে পারে। জাতিসংঘের মতে, দেশটির বর্তমান প্রবৃদ্ধির হারে অর্থনীতি ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে।  

আসাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমন-পীড়নের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের রূপ নেয় এবং দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে সিরিয়ার অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। দেশটির অর্থনীতির প্রধান খাতগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলে দেশটির পুনর্গঠনে বড় অগ্রগতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  

ইইউ আশা করছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে সিরিয়ায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে এবং ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। তবে পশ্চিমা বিশ্ব এখনও দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং নতুন সরকার গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান।  

সিরিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। আসাদের প্রধান মিত্র রাশিয়া ও ইরান তার শাসনামলে সিরিয়ায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল, যা নতুন পরিস্থিতিতে পরিবর্তন হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেখানে নিজেদের উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করছে।  

সিরিয়ার নতুন সরকার আন্তর্জাতিক মিত্রদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে পশ্চিমা বিশ্ব এখনও সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বিধান্বিত।  

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে ইইউ একদিকে সিরিয়ার অর্থনীতি পুনর্গঠনের সহায়তা করবে, অন্যদিকে সেখানে নিজেদের কৌশলগত প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করবে। তবে এই প্রক্রিয়া কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে সিরিয়ার নতুন শাসকদের রাজনৈতিক নীতির ওপর।