বরিশালে মানব পাচারকারীর সন্ধান, নিঃস্ব হচ্ছে অভিবাসী প্রত্যাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২রা জুলাই ২০২৪ ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
বরিশালে মানব পাচারকারীর সন্ধান, নিঃস্ব হচ্ছে অভিবাসী প্রত্যাসীরা

বরিশালে প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশে মানব পাচার এবং অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী নগরীর কাউনিয়া বাশেঁরহাটখোলা এলাকার বাসিন্দা শহিদুর এর ভাইয়ের ছেলে মুশফিকুর রহমান খান বাদী এ ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং ১০৮/২০২৪)। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার এসআই শিহাব জানিয়েছেন প্রাথমিক তদন্তে প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।


মামলা সূত্রে জানা যায়, নগরীর কলেজ রোড তালভিটা এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা নাসরিন বেগম (৪৫) এর সাথে কাউনিয়া বাশেঁরহাটখোলা এলাকার বাসিন্দা শহিদুর এর সাথে পূর্ব পরিচয় ছিল। নাসরিন বেগম শহিদুরকে জানায় তার স্বামী ঝালকাঠি থানার শেখেরহাট গ্রামের বাসিন্দা ছাবেদ আলী খন্দকারের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৫২) ফ্রান্সে থাকেন এবং তিনি বাংলাদেশ থেকে সেখানে লোক নিতে পারেন। মামলার দুই নম্বর আসামী শহিদুল ইসলাম বিদেশ থেকে দেশে আসলে শহিদুরকে তাদের বাসায় ডেকে নেয় এবং তাকে স্বপরিবারে ফ্রান্সে নিয়ে যাবেন। বিনিময়ে তাকে ২৭ লাখ টাকা দিতে হবে। আসামীর কথা অনুযায়ী শহিদুর তাকে ২৭ লাখ টাকা প্রদান করেন। এরপর ২নং আসামী শহিদুল ইসলাম তার স্ত্রী নাসরিনের একাউন্টে আরো ১৯ লাখ টাকা জমা দিতে বলেন এবং জানান যে, ফ্রান্সে পৌঁছাবার পর তাদেরকে ১০ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী শহিদুর মামলার ১নং আসামী নাসরিন বেগমের একাউন্টে (জনতা ব্যাংক বরিশালের কর্পোরেট শাখা, হিসাব নম্বর ০০৭২ .... ৮৪) ১৯ লাখ টাকা জমা দেন। এরপর গত বছর ১৫ মে শহিদুর রহমান তার স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে তাদেরকে নদীয়ার একটি হোটেলে রাখা হয় এবং তাদের কাছ থেকে ২নং আসামী বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে যায়। দীর্ঘ ৬ মাস হোটেলে থাকার পর তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ২নং আসামী শহিদুল ইসলাম তাদের কাছে আরো ৬ লাখ টাকা দাবি করে এবং না দিলে তাদেরকে অবৈধ হিসেবে ভারতীয় পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। ভুক্তভোগী শহিদুর বাংলাদেশ থেকে আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে আরো ৬ লাখ টাকা নিয়ে ২নং আসামীকে দেন। এরপর গত বছর ৪ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী শহিদুর রহমান খান ও তার স্ত্রী সন্তানকে ফ্রান্সে নিয়ে যায় শহিদুল ইসলাম। ফ্রান্সে গিয়ে ভারতের মতো একইভাবে আরেকটি হোটেলে উঠায় তাদেরকে। সেখানে বাংলাদেশী টাকায় ৬ লাখ টাকা ভাড়া জমে যাওয়ায় ভুক্তভোগী তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পুনরায় বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে হোটেল ভাড়া পরিশোধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ভুক্তভোগী শহিদুর প্রতারকের খপ্পড়ে পড়েছেন বুঝতে পারলেও নিজেই এখন পরিবার নিয়ে ফ্রান্সে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী মুশফিকুর রহমান খান। 


এদিকে নাসরিন-শহিদুল দম্পতির প্রতারণার শিকার ঢাকার মাতুয়াইলের বাসিন্দা আতিক নামে একজনের  কাছ থেকে একইভাবে নাসরিনের একাউন্টে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে তাকে ফ্রান্সে না নিয়ে প্রতারণা করেছে বলে জানা গেছে। আরও জানা গেছে, প্রতারক নাসরিন-শহিদুল দম্পতি তাদের বড় ছেলে নাদিম মাহফুজ ও নাসরিনের ভাই মিরন তালুকদারের মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করে আসছে। 


জানা গেছে, বিদেশ পাঠানোর কথা বলে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে ভারতের নদীয়া জেলার কল্যাণী থানার এইমস হাসপাতালের কাছে একটি হোটেলে রেখে ওইসব লোকের নামে ভারতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র, আধারকার্ড, ভারতীয় পাসপোর্ট বানিয়ে তাদেরকে বিদেশে পাঠায় এবং বিদেশ নিয়ে জীম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়।


এ বিষয়ে জানার জন্য নাসরিনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল করা হলে তার ছেলে নাদিম ফোন রিসিভ করে জানায় সে ব্যস্ত পরে কথা বলবেন। পরবর্তীতে আবারো ফোন দেওয়া হলে নাসরিনের ভাই পরিচয় দিয়ে মিরন তালুকদার নামে একজন বলেন, তার বোন ফোন রেখে বাড়িতে গেছে। এরপরই ফোনটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।


মামলার বাদী মুশফিকুর রহমান জানান, শুধুমাত্র তার চাচার সাথেই প্রতারণা করেনি নাসরিন ও তার স্বামী শহিদুল ইসলাম। বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সাথেই প্রতারণা করছে তারা। এদিকে মামলা দায়েরের পর প্রতারক নাসরিন তার সন্তানদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আশংকা জানিয়ে বাদী মুশফিকুর রহমান জানান, নাসরিন ও তার সন্তানদের ফ্রান্সে ভিসা হয়ে গেছে। তাই তিনি এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 


এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার এসআই শিহাব জানান, প্রাথমিক তদন্তে প্রতারণার  বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও এ বিষয়ে আরো তদন্ত চলছে।