পদ্মা সেতুর প্রভাব : বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা ঢাকা বরিশাল আকাশপথ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৯শে আগস্ট ২০২২ ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
পদ্মা সেতুর প্রভাব : বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা ঢাকা বরিশাল আকাশপথ!

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা-বরিশাল আকাশ পথে নিয়মিত ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাড়া কমিয়েও যাত্রী না পাওয়ায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিমান ফ্লাইট সংখ্যা কমালেও বন্ধ হয়ে গেছে বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার। একই পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলাও। কর্তৃপক্ষ বলছে যাত্রী সংকট কাটলে সরজমিন পর্যবেক্ষণ শেষে পুনরায় ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হবে। এদিকে ফ্লাইট কমিয়ে আনলে এক সময় আকাশপথে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বরিশালের সচেতন নাগরিকরা।


সূত্র মতে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগের জন্য ১৯৬৮ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জে বিমান বন্দরের জমি অধিগ্রহণ হলেও বিমান চলাচল শুরু হয় ১৯৯৫ সালের ১৭ জুলাই। তবে লোকসানের অজুহাতে চালু হওয়ার ৩ বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় বিমানের এ অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে বিমান চালাচল শুরু হলেও পরে একসময় আবার তা বন্ধ হয়ে যায়।


দীর্ঘ ৯ বছর পর ২০১৫ সালে পুনরায় ঢাকা-বরিশাল রুটে নিয়মিত ফ্লাইট চলাচল শুরু করে। আকাশ পথে বরিশাল থেকে রাজধানীতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ২৫ মিনিট। তাই জনপ্রিয় হয়ে উঠে ঢাকা-বরিশাল আকাশপথ। ফলে এ রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার। আকাশপথে যাত্রী বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে নিয়মিত ফ্লাইট সংখ্যাও।


বরিশাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিমান, বেসরকারি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স সংস্থা মিলিয়ে সপ্তাহে ৩৩টি ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহন করছিল। আর এর সবই বরিশাল-ঢাকা রুটে।


যার মধ্যে বিমান বাংলাদেশ সপ্তাহে ৫টি, নভোএয়ার ১৪টি ও ইউএস-বাংলা ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। তবে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঢাকা-বরিশাল আকাশপথে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে।

এ কারণে ১ আগস্ট থেকে বরিশাল-ঢাকা রুটে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নভোএয়ারের ফ্লাইট। আর ২৯ জুলাই থেকে ফ্লাইট কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ বিমান। সর্বশেষ ফ্লাইট কমানোর ঘোষণা দেয় বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস-বাংলা।


এদিকে যাত্রী ধরে রাখতে ঈদুল আজহার পর ভাড়া কমিয়ে দেয় বিমান সংস্থাগুলো। ইউএস-বাংলা প্রতি আসনে সাড়ে ৪ হাজার থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে। আর নভোএয়ার ৪ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা করে। বাংলাদেশ বিমানও একই পথ অনুসরণ করে ২০০ টাকা ভাড়া কমায়। এরপরও খরচ তুলতে পারছিল না সরকারি-বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো।


নভোএয়ারের মার্কেটিং এন্ড মিডিয়া কমিউনিকেশনের সহকারী ম্যানেজার নীলাদ্রি মহারতœ বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই যাত্রী সংকট চলছে। কোনোভাবেই ফ্লাইটের খরচ উঠছে না। তারপরও যাত্রী সংকট কাটিয়ে ওঠার আশায় এতদিন ফ্লাইট চালিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু সংকট না কাটার কারণে ১ আগস্ট থেকে বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে নভোএয়ারের ফ্লাইট চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।


ইউএস-বাংলার বরিশাল সেলস অফিসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ঢাকা-বরিশাল আকাশপথে তাদের ৭০ আসনের উড়োজাহাজ যাত্রী পরিবহন করছিল। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটে এক-তৃতীয়াংশ আসন ফাঁকা যাচ্ছে। যাত্রী সংকট থাকার কথা স্বীকার করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বরিশাল বিমানবন্দর ইনচার্জ সাইফুর রহমান বলেন, ঢাকা-ব্যাংকক এবং ঢাকা-কলকাতা আকাশপথে ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে। তাই ঢাকা-বরিশাল আকাশপথে প্রতিদিন দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ২২ আগস্ট থেকে এই পথে বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে ৫টায় বরিশাল এসে আবার ৫টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ফ্লাইট বরিশাল ত্যাগ করবে।


বরিশাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে যাত্রীসংখ্যা কমতে থাকে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ৫ আগস্ট থেকে সপ্তাহে তিন দিন (বৃহস্পতি, শুক্র ও রবিবার) ফ্লাইট চালু রাখার ঘোষণা দেয়।


বরিশাল বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম তালুকদার বলেন, সপ্তাহে সাত দিন বিমান বাংলাদেশ ৫টি, নভোএয়ার ১৪টি ও ইউএস-বাংলার ১৪টি ফ্লাইট চলাচল করতো। পদ্মা সেতু চালুর পর বিমানেরও যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। আশা করা হচ্ছিল এ সংকট কেটে যাবে। কিন্তু সংকট কাটেনি।


বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, যে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকেই ভালো সময়ের জন্য ধৈর্য ধরতে হয়। এভাবে ফ্লাইট কমিয়ে আনলে এক সময় আকাশপথে বাংলাদেশ বিমান বন্ধ করে দেয়ার আশঙ্কার কথা জানান তিনি। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট কমিয়ে আনার বিষয়টি আবারো ভেবে দেখার অনুরোধ জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।


প্রসঙ্গত, বর্তমানে ১৬০ দশমিক ৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট এবং প্রস্থ ১০০ ফুট।

যেখানে এটিআর ৭২-৫০০, ড্যাশ-৮-কিউ-৪০০ মডেলের মতো উড়োজাহাজ চলাচল করছে। যেগুলো ৬৫-৭২ জন যাত্রী বহনে সক্ষম।