ভারতে চলছে ১৭তম লোকসভা নির্বাচন। চলতি নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে ভোট যত এগোচ্ছে, ততই উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে বিজেপির নেতা-কর্মীরা। গতবার মোদি-ঝড় ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছিল বিজেপিকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মনে করছেন এবারও জিতবেন নিজের ক্যারিশমায়। কিন্তু, দেশে প্রথম দু–দফার ভোটের পর বিরোধীরা বলছে, ঝড়ের বেগে আসন হারাচ্ছে বিজেপি। ভোট বিশ্লেষকরাও তাদের এই দাবিকে সমর্থন করছেন। ভোটের বিষয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ৭৫.২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। তুলনায় উত্তরপ্রদেশে ভোট পড়েছে মাত্রই ৫৮.১২ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে ৬১.৫২ শতাংশ, ওডিশায় ৫৭.৪১ ও ছত্তিশগড়ে ৬৮.৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।
১২ রাজ্যের ৯৫ আসনের মধ্যে আসাম, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকে ভোটযন্ত্রে গোলযোগের অভিযোগ উঠেছে। মহারাষ্ট্রের নানদেড় লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ৭৮টি ইভিএমে গোলযোগের অভিযোগ ওঠে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফার ভোটে সবচেয়ে বেশি তামিলনাড়ুতে ৩৮ আসনে ভোট হয়েছে। ইভিএম বিভ্রাটের খবরও বেশি ওই রাজ্যে। মোট ৫১টি। ওডিশায় শতাধিক বুথে ইভিএম সমস্যা দেখা দিলেও কমিশন তৎপরতার সঙ্গে তা পাল্টে দেয়। তবে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা সুরেন্দ্র কুমার ৪টি বুথে ইভিএম ও ভিভিপ্যাটে গোলযোগের কারণে নতুন করে ভোটের সুপারিশ করেছেন। বিহারের ভাগলপুর ও পূর্ণিয়াতেও কিছু বুথে ইভিএম কাজ করেনি। উত্তরপ্রদেশের আগ্রা, মথুরা থেকেও ভোটযন্ত্র বিভ্রাটের অভিযোগ ওঠেছে।
ভোটের আগে বিজেপির শীর্ষ নেতারা মনে করছিলেন, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, দিল্লিসহ কয়েকটি রাজ্যে আসন সামান্য কমে যাওয়া এবং উত্তরপ্রদেশের ধাক্কার পরেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে চলেছে বিজেপি দলই। দলের এক নেতা বলেছিলেন, ‘উত্তরপ্রদেশের ঘাটতি মিটিয়ে দেবে ওড়িশ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর–পূর্বাঞ্চল। ৫০টি আসন কমলে দাঁড়াবে ২৩২। এনডিএ শরিকদের যোগ করে ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে সময় লাগবে না।’
কিন্তু দ্বিতীয় দফার পর তারা নতুন করে ঘুঁটি সাজাতে বসেছেন। উল্টোদিকে দু–দফায় মোট ১৮৬ আসনে (৯১+৯৫) ভোটের পর আত্মবিশ্বাসের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে কংগ্রেস নেতাদের। বৃহস্পতিবার ১২টি রাজ্যের যে ৯৫টি আসনে ভোট হয়েছে তাতেও বিজেপি তথা মোদির হার ও কংগ্রেসের জয় দেখতে পাচ্ছে ২৪ আকবর রোড। সমীক্ষকরাও অনেকেই মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশে কম ভোট পড়া প্রমাণ করছে আগের বারের মতো মোদিকে জেতাতে দলে-দলে লোক আর বুথে আসছেন না। তবে তামিলনাড়ুতে আগের বারের তুলনায় বেশ কিছুটা কম ভোট পড়াকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। এর মধ্যে একাধিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ছবিটা বদলে গেছে প্রথম দফার ৯১টি কেন্দ্রে ভোটের পর।
এই দাবি করেছে দেশের প্রথম সারির দুই সমীক্ষক সংস্থা সি–ভোটার এবং সিএসডিএস সি–ভোটার বলছে, ৭ মার্চ মোদি ও বিজেপি–র জনপ্রিয়তা ছিল প্রায় ৬২ শতাংশ। মাত্র এক মাসের মধ্যে ১২ এপ্রিল তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশে। মাসখানেক আগের সমীক্ষায় বিহারে ২৮ থেকে ৩৪ আসন দেওয়া হচ্ছিল এনডিএ–কে। মহারাষ্ট্রে ৩৮–৪২টি আসন পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন বিরোধীরা মনে করছে, সংখ্যাগুলো ছিল অতিরঞ্জিত। আসামে দ্বিতীয় দফায় যে ৫টি আসনে ভোট হয়েছে তার মধ্যে নওগাঁ, মঙ্গলদই ও শিলচরে জয়ের আশা করছে কংগ্রেস। কর্ণাটক, ছত্তিশগড়, বিহার এবং ওড়িশ্যাতেও ভাল ফলের আশা নেই বিজেপির। উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফায় ৬ এবং দ্বিতীয় দফায় ৩–৪টি আসন বিজেপি হারাতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই প্রবণতা বজায় থাকলে ওই রাজ্যে ৮০টির মধ্যে ২০–২৫টি আসন পাওয়াও বিজেপির পক্ষে কঠিন হতে পারে। গতবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ওই রাজ্য থেকে ৭৩টি আসন পেয়েছিল।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।