ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় অর্ধশত মুসল্লি নিহত হওয়ার পর সপ্তাহ পার হয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার মসজিদ দুটি নতুন করে খোলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এদিন জুমার নামাজে হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নেবেন বলে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে জানা গেছে।আগামীকাল মসজিদ দু'টিতে যখন মুসল্লিরা নামাজ পড়বেন, তখন মসজিদের বাইরে নিরাপত্তা দেবে স্থানীয় তিনটি বাইকার গ্যাং।১৫ মার্চের ওই হামলায় ৫০ জনের প্রাণহানির পর স্থানীয় বাইকার গ্যাং দ্য মঙ্গরেল মব, কিং কোবরা ও দ্য ব্ল্যাক পাওয়ার নামের তিনটি বাইকার গ্যাং দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার করেছে।
দ্য মঙ্গরেল মবের প্রেসিডেন্ট সনি ফাতু জুমআর নামাজের সময় মসজিদের বাইরে নিরাপত্তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন মুসলিম নেতাদের। তিনি বলেন, আমাদের মুসলিম ভাই এবং বোনরা যতদিন পর্যন্ত মনে করবেন তাদের নিরাপত্তা এবং সহায়তা প্রয়োজন, আমরা ততদিন সহায়তা দেব।শুক্রবারের জুমআর নামাজের ব্যাপারে মুসলিমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দ্য মঙ্গরেল মব মসজিদের বাইরে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ফাতু বলেন, কোনো ধরনের ভয়ভীতি ছাড়াই মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় আমরা নিরাপত্তা দিতে পারবো কি-না, সেটি প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছিল।অবশ্যই আমরা নিরাপত্তা দিতে পারবো। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা জুমআর নামাজের সময় উপযুক্ত পোশাক পরিধান করবো।’
‘আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র থাকবে না। আমরা মসজিদের ভেতরের দরজার কাছে শান্তিপূর্ণভাবে নিরাপত্তা দেব। যাতে মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা স্বস্তিতে নামাজ পড়তে পারেন।’ওয়াইকাতো মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান চিকিৎসক আসাদ মহসিন বলেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন ধরনের মানুষের কাছে থেকে সহায়তার যে প্রস্তাব পেয়েছেন তাকে সাধুবাদ জানান তারা।তিনি বলেন, এটা আমাদের শোক কাটিয়ে উঠতে শক্তি জোগাচ্ছে। আমরা তাদেরকে মসজিদে আসতে এবং আমাদের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা তাদের অংশ, তারা আমাদের অংশ। ইসলাম অন্তর্ভূক্তিমূলক ধর্ম, বিচারের ঊর্ধ্বে। আমরা তাদের গ্যাং মেম্বার হিসেবে দেখছি না, তাদের মানুষ হিসেবে দেখছি।দ্য কিং কোবরা গ্যাংয়ের সদস্যরা নিউজিল্যান্ডের পনসনবি মসজিদ আল জামিয়ার জ্যেষ্ঠ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। মঙ্গরেল মবের অন্যান্য শাখার সদস্যরাও দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। এমনকি এই গ্যাং গোষ্ঠীর অস্ট্রেলিয়া শাখার সদস্যরাও শনিবার সিডনিতে মসজিদে নামাজের সময় বাইরে পাহারা দিয়েছেন।
এদিকে শোক-শ্রদ্ধা আর কান্নার থমথমে পরিবেশের মধ্যেই শুরু হয়েছে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলায় নিহতদের দাফন। সর্বপ্রথম সমাহিত করা হয় ১৫ বছর বয়সী সিরীয় শরণার্থী কিশোর হামজা মুস্তাফা ও তার বাবা খালেদ মুস্তাফাকে (৪৪)।এদিকে সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সন্ত্রাসকে আন্তর্জাতিক হুমকি অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডান।নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অংশ হিসেবে আগামীকাল শুক্রবার ২ মিনিটের নীরবতা পালন ও একই দিন দেশটির সরকারি বেতার ও টেলিভিশনে একযোগে জুমার নামাজের আজান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। খবর এএফপি, আলজাজিরা ও রয়টার্সের।উল্লেখ্য, ১৫ মার্চ শুক্রবার রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা চালায় উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেনটন টেরেন্ট। এতে নিহত হন ৫০ মুসল্লি। গুরুতর আহত হন আরও ৫০ জন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।