প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:০
নেপালে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেওয়ায় সরকারি মন্ত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডু ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় হেলিকপ্টারে করে মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাসভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংসদ ভবন রক্ষায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সামরিক ব্যারাকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার কাঠমান্ডুর ভৈসেপাটি এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবনে হামলা চালায়। ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ললিতপুরে যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী প্রিথ্বী সুব্বা গুরুংয়ের বাড়িতে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্যদিকে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পৌডেলের ভৈসেপাটির বাসভবনে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এমনকি সোমবার পদত্যাগ করা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভকারীরা শুধু ক্ষমতাসীনদের বাড়িতেই নয়, বিরোধী দলীয় নেতাদের বাসভবনও টার্গেট করেছে। সিপিএন এর চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা পুষ্পকমল দাহালের বাড়িতেও পাথর ছোড়া হয়। স্থানীয় সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন জেলায় মুখ্যমন্ত্রী, প্রাদেশিক মন্ত্রী এবং অন্যান্য নেতাদের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে।
রাজধানী কাঠমান্ডু উপত্যকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একই চিত্র দেখা যায়। ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে শুরু হলেও তা দ্রুতই সরকারবিরোধী সহিংসতায় রূপ নেয়।
সহিংসতা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলপ্রয়োগের ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। কয়েক’শ মানুষ আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। নিহতদের বেশিরভাগই কাঠমান্ডুর ভেতরেই গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
বিক্ষোভের চাপ মোকাবিলা করতে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। তবে পরিস্থিতি শান্ত না হয়ে উল্টো আরও উত্তেজনা বাড়তে থাকে। জনগণের ক্ষোভের মুখে মন্ত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায়।
এদিকে, বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগের দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আন্দোলন নেপালের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।