প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৩
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের জেরে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। কেপি শর্মা অলি মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) পদত্যাগপত্র জমা দেন। বিবিসি জানায়, এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান সংকটের সাংবিধানিক সমাধানের পথ প্রশস্ত করতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। কারফিউ অমান্য করে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামে, এমনকি বেশ কিছু মন্ত্রী ও নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
সংঘর্ষ দমনে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে গুলি চালানো হলে অন্তত ১৯ জন প্রাণ হারান, যার মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয় রাজধানী কাঠমান্ডুতেই। এতে আন্দোলন আরও বিস্তৃত রূপ নেয়।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার থেকেই সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এবং পানি সরবরাহ মন্ত্রী একে একে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এরপরই আন্দোলনরত জেনারেশন জির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও জোরালো হয়।
গত সপ্তাহে অলির নেতৃত্বাধীন সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, হোয়াটসঅ্যাপ ও এক্সসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করা হয়। তবে টিকটকসহ পাঁচটি অ্যাপ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকে।
সরকারের এই পদক্ষেপে পর্যটন ও ব্যবসা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। প্রতিবাদে সাতটি শহরে একযোগে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নামে।
মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। তবে ততক্ষণে আন্দোলন শুধু নিষেধাজ্ঞা বিরোধী দাবিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং দুর্নীতিবিরোধী স্লোগানে রূপ নেয় সরকারবিরোধী এক আন্দোলনে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা আসে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জেনারেশন জির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন নেপালের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো।