অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: বাড়ির অমতে বিয়ে করে বিপাকে নবদম্পতি। থানা থেকে বিয়ের বৈধ শংসাপত্র মিলেছে। তবে কপালে জুটল ছাগল চুরির অপবাদে গণধোলাই। উন্মত্ত জনতা তাঁদের মারধরের পাশাপাশি বাইক ভাঙচুর করে। শনিবার রাতের এই ঘটনায় মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির ফরিদপুর সবজিহাটের তুমুল হইচই।
মাত্র দিনছয়েক আগে বছর বাইশের সুবীর মণ্ডলের সঙ্গে পূজার বিয়ে হয়। সাগরপাড়া থানার নতুন বামনাবাদের বাসিন্দা সুবীর। যুবকের পরিবারের লোকজন বিয়ে মেনে নেন। তবে পূজার বাবা সঞ্জীত মণ্ডল ওরফে ট্যাটন তা মেনে নেননি। তিনি মেয়েকে ফেরত পাওয়ার আশায় থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। যার ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। মেয়ের হদিশ মেলে।
শনিবার সন্ধেয় সুবীর এবং পূজাকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। উপস্থিত ছিলেন পূজার বাবাও। পুলিশের সামনেই বাবাকে পূজা জানান, “আমি সাবালিকা। নিজের ইচ্ছায় আমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছি। আমি ওর সঙ্গে থাকতে চাই।” একথা শোনার পর পুলিশ জানিয়ে দেয়, যেহেতু ছেলেমেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক, তাই এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। ওদের বিয়ে বৈধ। ওই কথার পর পূজা ও সুবীর থানা থেকে বেরিয়ে যান। বাইকে চড়ে বাড়ির দিকে রওনা দেন।
তবে সুবীর জানান, “আমরা বাইকে চড়ে বাড়ির দিকে রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দেখি চার-পাঁচটা মোটরবাইক আমাদের অনুসরণ করছে। ওই অবস্থায় ভয় পেয়ে আমরা আরও জোরে বাইক চালাতে থাকি। পরিস্থতি বেগতিক বুঝে বাড়ির দিকে না গিয়ে আমরা ডোমকলের দিকে যেতে থাকি। কিন্তু ফরিদপুরের কাছে যেতেই দেখি সামনে থেকে কিছু মানুষ গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করছে। ভয়ে চালক গাড়ি থামাতেই লোকজন গাড়ি থেকে নামিয়ে ছাগল চোর বলে মারতে থাকে।”
ফরিদপুর পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূল নেতা কুদ্দুস আলি জানান, “জনতার ভিড় ও হইচই শুনে কাছে গিয়ে দেখি জনগণ ওই দম্পতি ও গাড়ির চালককে হেনস্তা করছে। তাদের থামিয়ে বিষয়টা জানলাম। বুঝলাম ওটা ছাগল চুরির ঘটনা নয়। তাঁদের নিরাপদ স্থানে রেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তার মধ্যে ক্ষুব্ধ জনতাও বুঝতে পারেন তাদের ভুল বুঝানো হয়েছে। যারা ভুল বুঝিয়ে একাজ করেছে তাদের খোঁজ শুরু হয়। তবে মদতদাতারা সুযোগ বুঝে চম্পট দেয়।”
এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। নবদম্পতিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তাদের কাছ থেকে অভিযোগ নিয়ে নিরাপদে বাড়িতে পৌছে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় মেয়ের বাবা সঞ্জীত মণ্ডলের মতামত পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে মেয়ের মা সোমা মণ্ডল জানান, “ওই ঘটনার আমরা কিছু জানিনা। কাউকে বলিওনি ওদের গাড়ি ঘেরাও করতে।” তবে কারা নবদম্পতিকে হেনস্তা করল? তার সদুত্তর দেননি পূজার মা। নতুন বামনাবাদের বাসিন্দা তথা দেবীপুর পঞ্চায়েতের সদস্য বাবলু মণ্ডল জানান, “এই ঘটনাটি দুঃখজনক। সঞ্জীতের উচিত এবার মেয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া।”
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।