প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২১, ২২:২৬
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ার ফলে ইতালিতে আবারও রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘ আলোচনা শেষে নাগরিক নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সোমবার থেকে ১০টি অঞ্চলকে রেড জোনের আওতায় আনা হয়েছে। অঞ্চলগুলো হলো- ট্রেন্টো, লম্বার্ডিয়া, এমিলিয়া রোমনা, পিওমন্টে, ভেনেটো, ফ্রিউলি ভেনিজিয়া জুলিয়া, লাজিও, মার্কে, পুলিয়া, কাম্পানিয়া এবং মোলিস। এর মধ্যে কাম্পানিয়া ও মোলিস রেড জোনেই ছিল।
এ সময়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় অতি প্রয়োজন ছাড়া চলাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র জরুরি কাজে যাওয়া, স্বাস্থ্যসেবা অতি প্রয়োজন ছাড়া যেতে হলে অটো সার্টিফিকেট নিতে হবে।
সর্বসাধারণের জন্য শো, প্রদর্শনী এবং জাদুঘর, শিশুদের শিক্ষামূলক কর্যক্রম বন্ধ থাকবে, বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। এমনকি নিজ বাসার কাছেও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত দু’মাসে দেশটিতে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। হাসপাতালগুলোর বিছানা রোগী দিয়ে আবারও পরিপূর্ণ হতে চলছে যার ফলে দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নতুন করে দেশটির কয়েকটি অঞ্চলে লাল জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সোমবার ১৫ মার্চ থেকে নতুন এ অধ্যাদেশ কার্যকর হবে। ইতালির উচ্চস্থ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কন্ট্রোল রুম থেকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, গত ১ মার্চ থেকে ৭ মার্চ এক সপ্তাহে প্রতি এক লাখ বাসিন্দার সাপ্তাহিক কেস ২২ হাজার পাঁচশ চৌষট্টি অন্যদিকে গত ২২ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল লাখে ১৯ হাজার চারশ সাতাশি যা গত মাসের তুলনায় কয়েক হাজার কম।
ইতালিতে করোনার এ রকম ঊর্ধগতির কারণে সোমবার থেকে অফিসিয়ালি দশটি অঞ্চলে রেড জোন কার্যকর হবে।
এদিকে আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে স্টার উৎসবকে ঘিরে (পাসকোয়া) ৩ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত গোটা ইতালিতে লকডাউন চলবে। এ সময়ের মধ্যে আত্মীয়-পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারবে না।
রেড জোন (লাল) থাকা অবস্থায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে কেউ বের হতে পারবে না এবং যে সকল এলাকায় ‘কমলা’ সিগনাল থাকবে সেখানে জনসাধারণের জন্য রেস্টুরেন্ট ও বার বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শুধুমাত্র নিয়ে যাওয়া (টেকওয়ে) এবং হোম ডেলিভারি করা যাবে। রাত দশটা পর্যন্ত হোম ডেলিভারি খোলা থাকবে এবং যাদের রান্নার ঝামেলা নেই এসব প্রতিষ্ঠানগুলো টেকওয়ে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত করতে পারবে।
ইতোমধ্যে ইতালি অর্থনৈতিক মন্দার দিকে যাচ্ছে গত এক বছর ধরে কোনো পর্যটকদের আনাগোনা নেই। করোনার ফলে দিনদিন ছোট বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যাও। অনেক চেষ্টা করেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জলকন্যা খ্যাত পর্যটন নগরী ভেনিসের এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসটি শাহাদাত হোসেন বলেন, করোনা শুরু থেকে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য একেবারে থমকে আছে। সবাই হয়তো জানে ভেনিস হলো পর্যটন নির্ভর একটি শহর তাই হোটেল, সুভ্যেনিরসহ যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবই পর্যটন এলাকায় ফলে গত এক বছর ধরে ইতালিতে কোন পর্যটকদের দেখা নেই।
‘আর্থিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি আমরা। ব্যবসা না থাকলেও ভাড়া গুনতে হয় প্রতি মাসে। গত এক বছরে অনেক ক্ষতি হয়েছে। কোনো রকম স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি।’
শুধু আমি নই ভেনিসের সকল ব্যবসায়ীর একই অবস্থা। রোমের আরেক সুপার সপ ব্যবসায়ী সৈয়দ আল ফারাবী বলেন, সোমবার থেকে রোমসহ আরও কয়েকটি অঞ্চল রেড জোনের আওতায় আসবে।
ইতোমধ্যে মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এখন মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারলে আমাদের বেচাকেনা কমে যাবে। অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেবে। তাছাড়া সন্ধ্যা ছয়টার পর অ্যালকোহল বিক্রি বন্ধ থাকবে ক্রেতা না থাকলে আমরা কার কাছে বিক্রি করব।
উল্লেখ্য, সরকার কয়েকটি অঞ্চলে রেড জোন ঘোষণার পাশাপাশি আর্থিকভাবে সংকটে পড়া মানুষদের জন্য বোনুস স্পেসা নামক সহযোগিতা চালু করেঢ়েন অনলাইনে। ইতোমধ্যে আবেদন শুরু হয়ে গেছে।
সংখ্যাভিত্তিক ২শ ইউরো থেকে পাঁচশ ইউরো আর্থিক সংকটে থাকা মানুষ এ সুবিধা পাবেন। যাদের ইসে (isse) ৮ হাজারের নিচে তারা এ আবেদন করতে পারবেন।