শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও রাজনীতিকদের একাংশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ও আশপাশের এলাকাগুলো এখন তাদের অন্যতম নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। এসব নেতারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে সেখানে সংগঠিত হচ্ছেন এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারতে অবস্থানরত এসব নেতা বাংলাদেশে রাজনৈতিক পুনরুত্থানের জন্য কূটকৌশল এবং নাশকতার পরিকল্পনা করছেন। কলকাতার পার্ক সার্কাস, নিউটাউন, যাত্রাগাছি, গুলশান কলোনি, ভাঙড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় শতাধিক নেতার অবস্থানের খবর পাওয়া গেছে। এদের অনেকেই বহু আগে থেকে কলকাতায় সম্পত্তি কিনে রেখেছেন।
সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও যুবলীগ নেতারাও কলকাতায় সক্রিয় রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং একেএম মমিনুল হক সাঈদ। তাদের পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও সেখানে অবস্থানের কথা জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, কলকাতায় বসে আওয়ামী লীগের এই নেতারা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সহযোগিতায় নিয়মিত বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের ভেতরে নাশকতা চালিয়ে সরকারকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা যায়, এ নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বিলাসবহুল এলাকায় বসবাস করছেন এবং স্থানীয় সমাজের সঙ্গে মিশে থাকার চেষ্টা করছেন।
নিউটাউন ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট এবং কমপ্লেক্সগুলোতে এই নেতাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন এবং পুর্তি ভেদা কমপ্লেক্সে তাদের উপস্থিতির খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসব স্থানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে তারা বসবাস করছেন এবং আড়ালে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
এছাড়া, পার্ক সার্কাস ও ইকো পার্কের মতো এলাকাগুলোতে বাংলাদেশি নেতাদের দেখা গেছে। নিউটাউন থানার আওতাধীন বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের চলাফেরা নজরে এসেছে। তবে তাদের উপস্থিতি এবং কার্যকলাপ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি নেতারা কলকাতার কিছু দালালের মাধ্যমে ফ্ল্যাট ভাড়া বা কেনার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া সেখানকার সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেও নিজেদের উপস্থিতি আড়াল করার চেষ্টা করছেন। কিছু অভিজাত কফি হাউস এবং রেস্টুরেন্টে তাদের নিয়মিত দেখা যায় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ ও তাদের কলকাতায় অবস্থানের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধরণের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।