নিজেই আক্রান্ত বরিশাল শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড !

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: শনিবার ১০ই এপ্রিল ২০২১ ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন
নিজেই আক্রান্ত বরিশাল শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড !

দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ডেডিকেটেড করোনা চিকিৎসার শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। করোনা সংক্রমনের প্রথম দিকে এ হাসপাতালের আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে রোগীর চাপ থাকলেও গত দুই মাস রোগী শূণ্য ছিল ওয়ার্ডটি। ওই সময়ে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে জনবল দেয়া থাকলেও করোনা ওয়ার্ডে কাজ করতে আগ্রহী নন তারা। ফলে ময়লা আবর্জনা আর ধূলোবালির স্তর পড়ে রয়েছে সেখানে। 


এদিকে হঠাৎ করেই বরিশালে করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালের এ ওয়ার্ডটিতে রোগী ভর্তি শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না করায় ময়লার দুর্গন্ধে ভোগান্তিতে পড়ছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। বর্তমানে এ দু’টি ওয়ার্ডে রোগী রয়েছেন ১৪৬ জন, যার মধ্যে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪০ জন রোগী। 


করোনা ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীর স্বজন তারিকুল ইসলাম জানান, চিকিৎসাসেবা পাওয়া গেলেও নানান সংকট আর সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। টয়লেট, ওয়াশরুমসহ ওয়ার্ডের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছে। আবার সিড়িকোঠার প্যাসেজসহ বিভিন্ন স্থানেও ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি এখানে ডাস্টবিনগুলোও ময়লা ভরে থাকে সবসময়। অনেক জায়গায় মোটা ধুলোর স্তর পরে রয়েছে।


আরেক রোগীর স্বজন বিথি আক্তার জানান, টয়লেট ও হাত-মুখ ধোয়ার বেসিনের এমন অবস্থা যে সেখানে গেলে দুর্গন্ধে বমি আসে। আবার লিফটবিহীন ভাঙাচোড়া ভবনটি সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়েও কষ্ট পোহাতে হয়।


করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অপর এক রোগীর স্বজন সোহাগ জানান, প্রথমবারের তুলনায় এখন করোনা রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম অনেকটাই অনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জরুরি বিভাগের পাশে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় রাখা ট্রায়েজ সেন্টারটি অনেক কাজে এসেছিলো এবারে সংস্কারের কারণে সেটিও সেখানে নেই। 


তিনি আরো বলেন, করোনা ওয়ার্ডে আইসিউইউ বেড, মাঝে মধ্যে অক্সিজেনের সংকট হলেও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এসকল সমাধান হয়েও যাচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসক, নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির জনবলের সংকটের কথা শুনছি। তবে এসব সংকটের মধ্যেও রোগীর চিকিৎসা যথাযথই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ওয়ার্ডের ভেতরে থাকা ময়লা-আবর্জনার কারণে এতটাই অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন যে রোগীরা এখানে করোনার চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন।


অভিযোগ রয়েছে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে জনবল দেওয়া থাকলেও তা পরিষ্কার হচ্ছে না, কারণ করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি দেওয়া হলেও সেখানে কাজ করতে আগ্রহী নন তারা।


এছাড়া মাত্র ১২টি আইসিইউ বেড দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকসহ করোনা ওয়ার্ড সংশ্লিষ্টদের। এদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা এ হাসপাতালে ২২টি থাকলেও ১০টির মতো বিকল হয়ে পড়ে আছে বলে জানা যায়।


করোনা ওয়ার্ডের ময়লা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে দাবী করে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।


এদিকে হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, বর্তমানে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কোনো বিষয় নেই। রোগীর চাপ থাকায় সেন্ট্রাল অক্সিজেনের বাহিরে সিলিন্ডারও ব্যবহার হচ্ছে। আর সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে একটি শেষ হয়ে গেলে অন্যটি প্রস্তুত করতে যেটুকু সময় লাগছে সেটুকুকেই সংকট হিসেবে বলছেন রোগীরা। এরবাহিরে রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে আইসিইউ সেবাও প্রদান করা হচ্ছে।


উল্লেখ্য শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে মোট তিন হাজার ৫৬২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে করোনা পজেটিভ রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৭১ জন ছিলো। আর এ দুটি ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫১০ জানের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৫০ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। 


গত ২৪ ঘণ্টায় শেবাচিম হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এ চারজনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আরটি পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক।