সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নয় মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। শনিবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাধারণত প্রতি বছর ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটকরা সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারেন। তবে এবার ৩১ জানুয়ারির পর থেকে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ থাকবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পূর্বে চার মাসের জন্য পর্যটক সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও এবার সেটি আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, আকস্মিকভাবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে দ্বীপের বাসিন্দারা বিপাকে পড়বেন। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শত শত মানুষ আয়ের সুযোগ হারাবেন। বিশেষ করে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিন হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এম এ আবদুর রহিম জিহাদী বলেছেন, অতীতে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। হঠাৎ করে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ হলে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দার জীবিকা পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটন মৌসুমে যে আয় হয়, তা দিয়েই তারা সারা বছর সংসার চালান। যদি জাহাজ চলাচলের সময় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হতো, তাহলে স্থানীয়দের জন্য কিছুটা স্বস্তি আসত।
এদিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন জানিয়েছেন, ৩১ জানুয়ারির পর থেকে সেন্টমার্টিনগামী কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। সরকার যদি পরে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, তাহলে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ নিষেধাজ্ঞার কারণে দ্বীপের হোটেল-মোটেল, খাবার দোকান, নৌপরিবহনসহ বিভিন্ন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকার পরিবেশ ও দ্বীপের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আগেও বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সেন্টমার্টিনে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটে, যা দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার জন্য পর্যটন নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পর্যটন মৌসুমে দ্বীপে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। হঠাৎ নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়বেন। সরকারের উচিত বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে দ্বীপবাসীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ হওয়ায় পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। পর্যটনের পাশাপাশি দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষা করাও জরুরি বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।