ইসলামে মানবাধিকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুপ্রতিষ্ঠিত বিষয়। ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমানভাবে সম্মানিত করেছে এবং সমাজে সবার জন্য সমান মর্যাদা ও সম্মানের অধিকার নিশ্চিত করেছে। ইসলাম মানুষকে একতা, ভ্রাতৃত্ব, এবং বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে, যেখানে বংশ, জাত, শ্রেণি বা বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই।
ইসলামে মানবাধিকার বলতে সেই অধিকারকে বোঝানো হয়, যা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে প্রদান করেছেন এবং যা পৃথিবীর কেউ রহিত করতে পারে না। ইসলামের মূল শিক্ষা হলো সবার সমান অধিকার এবং মর্যাদা—ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, কালো-সাদা—সবাই এক সমান অধিকারী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, "আমি মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও চমৎকার অবয়বে সৃষ্টি করেছি" (সূরা-আত-তিন)।
ইসলামের দৃষ্টিতে, মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার অধিকার এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকারও সবার জন্য সমান। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করা ইসলামিক মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইসলামে প্রতিটি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে।
ইসলামে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অধিকারও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 'মদিনা সনদ', যা হিজরি ৬২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, তা মানবাধিকারের এক অনন্য উদাহরণ। সেদিনের মদিনা সনদে মুসলমান, ইহুদি, খ্রিষ্টান, এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সমান নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল। সেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সমাজের নিরাপত্তা এবং একে অপরের ধর্মীয় অনুশীলনে হস্তক্ষেপ না করার শর্ত রাখা হয়। ইসলাম ঐক্য, সহনশীলতা এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একাগ্রতা ও সহযোগিতার প্রতি জোর দেয়।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিদায় হজের ভাষণেও মানবাধিকারের একটি স্পষ্ট চিত্র ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, "কোনো আরবের ওপরে অনারবের প্রাধান্য নেই, সাদা মানুষের প্রাধান্য নেই কালো মানুষের ওপর, বরং আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান সেই ব্যক্তি, যে তাকওয়াবান" (সূরা-আল হুজরাত)। ইসলামের এই নির্দেশনা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছিল।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে, দুঃখজনকভাবে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এখনো পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘটছে। আধুনিক সভ্যতা ও সরকারগুলো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। তবে, ইসলামের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়কালেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণরূপে সফল হয়েছিল, যা আজও একটি আদর্শ হিসেবে পরিগণিত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।