ভারত বাংলাদেশে স্থিতিশীল সম্পর্ক রাখতে চায়: এস জয়শঙ্করের মন্তব্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৩:৩১ অপরাহ্ন
ভারত বাংলাদেশে স্থিতিশীল সম্পর্ক রাখতে চায়: এস জয়শঙ্করের মন্তব্য

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সোমবার এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশী দেশ এবং ভারত তাদের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। 


ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি'র সাথে সাক্ষাৎকারে এস জয়শঙ্কর বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমরা তাদের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক রাখতে চাই। বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আমরা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করব না।” 


তিনি আরো যোগ করেন, প্রতিবেশী দেশগুলো একে অপরের ওপর নির্ভরশীল এবং এই সম্পর্কগুলি বজায় রাখতে পারলে দুই দেশেরই লাভ হয়। এই মন্তব্যের মাধ্যমে, তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।


এনডিটিভি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সাক্ষাৎকারে তিনি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ, ভারতে মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে ইরানের নেতার মন্তব্য, গাজা যুদ্ধ এবং নরেন্দ্র মোদির প্রথম ১০০ দিনের বিদেশ সফরের বিষয়েও কথা বলেছেন। 


মন্ত্রীর মন্তব্যের পর, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মনোভাব পরিষ্কার হয়েছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তাঁর ভারতীয় আশ্রয় গ্রহণ নিয়ে নানা খবর শোনা গেছে। গত আগস্ট মাসের শুরুতে, শেখ হাসিনা দেশে ব্যাপক ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের মুখে ভারতে পালিয়ে যান। 


ভারতে তাঁর আগমন ও আশ্রয়ের বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু জল্পনা-কল্পনা চলছে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেছিল এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তখন উপস্থিত ছিলেন। তবে, ব্রিটিশ হোম অফিস জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া সম্ভব নয়। 


ভারতের এক সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছিলেন যে শেখ হাসিনার চলে আসা ‘খুব স্বল্প নোটিসে’ হয়েছিল এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হবে।


এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন যে বাংলাদেশও ভারতের সাথে আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তবে তিনি এই সম্পর্ক হতে হবে "ন্যায্যতা এবং সমতার" ভিত্তিতে। ড. ইউনূস বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং এই সম্পর্কের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।


ড. ইউনূস বলেন, “যদি ভারত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে না আনে, তবে তাকে চুপ থাকতে হবে।” তার এই মন্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর, তিনি কোনো প্রকাশ্য বক্তব্য দেননি, যা বাংলাদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। 


এস জয়শঙ্করের মন্তব্য এবং ভারতীয় অবস্থান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি এবং ভবিষ্যতের সহযোগিতার দিকে ইঙ্গিত দেয়। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং এটি দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মন্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিতে ভারতীয় হস্তক্ষেপ না করার ও সম্পর্কের উন্নতির আশ্বাস প্রদান করে, যা দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।