শেখ হাসিনার পতন উদযাপন শহীদদের স্মরণে গান, কবিতা ও কাওয়ালীর অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: শুক্রবার ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১২ পূর্বাহ্ন
শেখ হাসিনার পতন উদযাপন  শহীদদের স্মরণে গান, কবিতা ও কাওয়ালীর অনুষ্ঠান

গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকা কলেজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক আবেগঘন সন্ধ্যায় শহীদদের স্মরণে আয়োজন করা হয় কবিতা, গান এবং কাওয়ালীর। এই অনুষ্ঠানে ঢাকা কলেজের ছাত্র জনতা সহ শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন, যারা শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করতে একত্রিত হয়েছিলেন।


অনুষ্ঠানটি আয়োজনের মূল প্রেরণা ছিল চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন, যা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই আন্দোলনের সময় বহু শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছে। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।


অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল কবিতা পাঠ, গান এবং কাওয়ালী পরিবেশনা। এছাড়াও দেশাত্মবোধক গান এবং নানা ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। শহীদদের স্মরণে পাঠ করা কবিতাগুলো ছিল তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতীক। 


গানের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দেশের প্রখ্যাত গায়করা। বিশেষ করে, কাওয়ালী পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানে এক অন্যরকম আবহ সৃষ্টি হয়, যা উপস্থিত সকলের মন ছুঁয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা কাওয়ালী পরিবেশনার সাথে তাল মিলিয়ে গানে গানে তাঁদের শোক এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 


এই অনুষ্ঠানের পেছনে আরও একটি বড় কারণ ছিল দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। সরাসরি শেখ হাসিনার পতনের কারণে শিক্ষার্থীরা এই অনুষ্ঠানটি আরও বৃহত্তর আকারে উদযাপন করে। দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্ররা শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল। তাঁর পতন তাঁদের কাছে একটি বড় বিজয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 


ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতন তাঁদের জন্য এক বিশাল মুক্তির অনুভূতি এনে দিয়েছে। তাঁরা মনে করেন, এই পতনের মাধ্যমে দেশের নতুন এক সূচনা হয়েছে, যেখানে তাঁরা স্বাধীনভাবে তাঁদের মত প্রকাশ করতে পারবেন এবং দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। 


অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাঁদের আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি শহীদদের প্রতি তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁরা জানান, দেশের স্বাধীনতা এবং সুশাসনের জন্য শহীদ হওয়া প্রতিটি ব্যক্তির আত্মত্যাগ কখনো ভোলার নয়, এবং তাঁদের স্মৃতিকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।


সন্ধ্যা শেষ হয় শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তাঁদের জন্য দোয়া করে। শিক্ষার্থীরা আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি হবে না এবং দেশ এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করবে, যেখানে শিক্ষার্থীদের মতামত এবং অধিকার সর্বদা সম্মানিত হবে। 


এই অনুষ্ঠানটি শুধু একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়, বরং তা ছিল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রেরণাদায়ক মঞ্চ, যেখানে তাঁরা তাঁদের প্রতিবাদ এবং আবেগকে প্রকাশ করতে পেরেছেন। শেখ হাসিনার পতনের পর এ ধরনের আয়োজন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।