নওগাঁর বিস্তীর্ণ প্রান্তরে সরিষা ফুলে ফুলে ভরে গেছে মাঠগুলো। এই সময়ে প্রতিটি সরিষা ক্ষেত হলুদ ফুলে সেজেছে। প্রতিবছর শীতের এই সময়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে আসেন মৌ খামারিরা। তারা সরিষার ক্ষেতকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। এতে একদিকে যেমন সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এবছর সরিষা ফুল থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলায় ১১টি উপহেলার মধ্যে ৯টি উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী, দিনাজপুর ও নাটোর জেলা থেকে ৮১ জন মৌ খামারি এসেছে। তারা সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন। মৌসুমে অন্তত ৬-৮ বার মধু সংগ্রহ হবে। খাটি মধু পেতে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাজশাহীর মোহনপুর থানার দর্শনপাড়া গ্রামের মৌচাষী রুমিনুল ইসলাম রুস্তম এবছর নওগাঁর মান্দা উপজেলার সোনাপুর গ্রামে ১০০টি মৌবাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ করেছেন এবং আরও ৫ লাখ টাকার মধু সংগ্রহের আশা করছেন। তিনি জানান, গত বছর আবহাওয়া খারাপ থাকায় সরিষা ফুল থেকে ১০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হয়েছিল। তবে এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মধুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
জামালপুর থেকে আসা মৌচাষী নুরুল আমিন ৬০টি মৌবাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন। দুইবার সংগ্রহের পর তিনি ১০ মন মধু পেয়েছেন। তিনি জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মধুর উৎপাদন বেশি হচ্ছে এবং মানও উন্নত।
মৌ খামারে কাজ করে শ্রমিকরাও বাড়তি আয় পাচ্ছেন। সোহেল নামে এক মৌ শ্রমিক জানান, মৌ খামারে কাজ করার ফলে তিনি এ মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করবেন।
এছাড়া নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়নের ফলে সরিষার ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই বছর জেলায় ৮১ জন মৌ খামারি প্রায় ৮ হাজার ৪৭৫টি মৌ বাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন। মধু সংগ্রহের পাশাপাশি কৃষকরা সচেতন হচ্ছেন যাতে মৌবাক্স স্থাপন করতে কোন সমস্যা না হয়।
এ বছর প্রায় ১ লাখ কেজিরও বেশি মধু সংগ্রহ হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। মৌচাষী ও কৃষকদের জন্য এটি একটি লাভজনক এবং জীবিকার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।