প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৫
বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসে বিদেশি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার যা প্রায় পুরোপুরি সরকারি খাতেই কেন্দ্রীভূত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী জুন শেষে দেশের মোট বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি যা দেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। এ সময় আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে বাংলাদেশ এই ঋণ পেয়েছে।
বিগত সরকারের সময় বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামাল দিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও বিদেশি ঋণ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও রিজার্ভ কমতে থাকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে রিজার্ভের পতন ঠেকাতে সক্ষম হয় এবং ডলারের বিনিময় হারও স্থিতিশীল হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক উৎস্য থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাওয়াই এর অন্যতম কারণ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ডলারের বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আসায় বিদেশি ঋণ গ্রহণের ঝুঁকি কিছুটা কমেছে। তবে ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে পরিশোধের চাপ তৈরি হবে। এর ফলে ঋণ টেকসই না হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারি খাতের অংশ সবচেয়ে বেশি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঋণ প্রয়োজন। কিন্তু অতীতে বিদেশি ঋণ নিয়ে অপচয় হয়েছে, সেটি বন্ধ না হলে ঋণ বৃথা হবে আর সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে পরিশোধের সক্ষমতা তৈরি হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে জুন শেষে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা তিন মাস আগে ছিল ৮৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি কিছুটা কমে ১৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন দেশি উৎসের চেয়ে বিদেশি ঋণের সুদের হার তুলনামূলক কম হওয়ায় বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকছেন। তবে যাদের বৈদেশিক আয় নেই তাদের এ ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এতে ভবিষ্যতে পরিশোধের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার বিদায় নেওয়ার সময় বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে তা কিছুটা বাড়লেও আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ১০৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বলছে বৈদেশিক ঋণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে ঋণের বোঝা দেশের অর্থনীতির জন্য চাপে পরিণত হবে।