সীমান্তে বাংলাদেশিদের প্রবেশ ঠেকাতে মৌমাছির বাহিনী মোতায়েন বিএসএফের

নিজস্ব প্রতিবেদক
সৌম্যা সাহা , কলকাতা প্রতিনিধি ভারত
প্রকাশিত: সোমবার ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১৪ অপরাহ্ন
সীমান্তে বাংলাদেশিদের প্রবেশ ঠেকাতে মৌমাছির বাহিনী মোতায়েন বিএসএফের

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবার বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মোতায়েন করেছে এক নতুন এবং চমকপ্রদ কৌশল—মৌমাছি। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর কৃত্রিম মৌচাক স্থাপন করেছে বিএসএফ। এই মৌচাকগুলোর উদ্দেশ্য হলো, অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধ করা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা।


সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে এই নতুন কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে বিএসএফের ১০ থেকে ১২ জন জওয়ান নদীয়া জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম কাদিপুরে জড়ো হন। সেখানে তারা মৌমাছি চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণকালীন তাদের মাথা এবং মুখমণ্ডল প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম দ্বারা সুরক্ষিত ছিল।


প্রকাশিত ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, সীমান্ত বেড়ায় বেশ কয়েকটি মৌ-বাক্স ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এই বাক্সগুলোতে থাকা মৌমাছিরা সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৬ কিলোমিটার সীমান্তের নিরাপত্তা দায়িত্বে রয়েছে বিএসএফের ৩২ নম্বর ব্যাটালিয়ন, এবং তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার সীমান্তে এই বাক্সগুলো স্থাপন করা হয়েছে।


৩২ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট সুজিত কুমার জানিয়েছেন, "সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর নতুন কৌশল খোঁজার সময় আমার মাথায় আসে যে মৌমাছি চাষের বাক্সগুলো কাঁটাতারের বেড়ায় রাখা যেতে পারে। আমরা প্রায়ই দেখি কাঁটাতার কেটে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটে। এছাড়া গরু চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপও ঘটে। কিন্তু মৌমাছির বাক্সগুলো স্থাপনের পর থেকে আমরা দেখেছি যে অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালানের হার শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছেছে।"


এই নতুন কৌশলকে চ্যালেঞ্জিং হলেও কার্যকর মনে করছেন অনেকে। বিএসএফের কর্মকর্তারা আশা করছেন, মৌমাছির আক্রমণের সম্ভাবনা যেকোনো অনুপ্রবেশকারী বা চোরাকারবারিকে সীমান্তে প্রবেশ করতে বাধা দেবে। সীমান্তে থাকা এই মৌচাকগুলো কেবল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিও বটে।


এদিকে, সীমান্তের গ্রামবাসীরা প্রথমে এই কৌশল নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বিএসএফের কার্যক্রম দেখে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিএসএফ একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যা ভবিষ্যতে অন্যান্য সীমান্ত সুরক্ষায়ও ব্যবহৃত হতে পারে। 


এটি সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে, যেখানে প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক কৌশল প্রয়োগ করা হবে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এই ধরনের কৌশল কার্যকর হলে ভবিষ্যতে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সীমানাতেও এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।