রাউন্ড রবিনেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ হওয়ায় বাংলাদেশকে দেশে ফিরতে হয়েছে প্রত্যাশা পূরণের আগেই। সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখতে থাকা ক্রিকেটাররা ভগ্ন হৃদয় নিয়ে রবিবার বিকেলে দেশে পা রেখেছেন। ইংল্যান্ডে তিনটি জয় পেলেও শেষ চারে না ওঠাকে ব্যর্থতাই মনে করছেন অধিনায়ক মাশরাফি, যার দায়ভার নিজের কাঁধে নিলেন তিনি। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছায় মাশরাফিদের বহনকারী বিমান। সেখানে নানা রকম আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অধিনায়ক, ‘যে প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিলাম, সেই জায়গা থেকে অবশ্যই হতাশ। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে আমরা যেভাবে খেলেছি, যদি আমাদের ভাগ্য সহায় হতো তাহলে হয়তো সেমিফাইনালে যেতে পারতাম। আমাদের খেলার ধরন ছিল ইতিবাচক।’
দলের ব্যর্থতার দায়ভার নিজের কাঁধেই নিলেন তিনি, ‘অধিনায়ক হিসেবে দলের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। আর অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থতার দায়ভার অনেকটাই আমার। আমি এর দায় নিচ্ছি, আমাকেই নিতে হবে। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তাকেও নিতে হতো।’ দলের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি নিজেও সমালোচনার শিকার হয়েছেন মাশরাফি, তবে এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না, ‘সমালোচনা হয়েছে বা হবে, এটা স্বাভাবিক। প্রত্যেক সিরিজ বা টুর্নামেন্টের পরই সেটা হয়, আর বিশ্বকাপের পর তো হবেই। তবে কিছু ব্যাপার যদি আমাদের পক্ষে থাকতো, তাহলে হয়তো ভিন্ন কিছু হতো।’
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর নিউজিল্যান্ডের কাছে লড়াই করে হার। এরপর ইংল্যান্ডের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের পর বৃষ্টিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে আবার জেগে ওঠে সেমিফাইনালের স্বপ্ন। অস্ট্রেলিয়ার রান পাহাড়ে চড়া না হলেও সেই স্বপ্ন আরও জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠে আফগানিস্তানকে হারিয়ে। কিন্তু ভারতের কাছে হার সব আশায় জল ঢেলে দেয়। মাশরাফি বললেন সেই কথা, ‘ভারতের বিপক্ষে হারের আগে পর্যন্ত আমাদের সেমিফাইনালে খেলার আশা টিকে ছিল। আমাদের পারফরম্যান্সে বৈচিত্র ছিল। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া হয়তো আমাদের সব খেলোয়াড় ধারাবাহিক ছিল না। তাছাড়া কিছু জায়গা ছিল যেখানে ভাগ্য সহায় থাকলে ভালো হতো।’ এই বিশ্বকাপে দলের পারফর্মার হিসেবে কয়েকজনকে এগিয়ে রাখলেন মাশরাফি, ‘সাকিব, মোস্তাফিজ, মুশফিক ও সাইফউদ্দিন অসাধারণ খেলেছে। অন্যরা অধারাবাহিক ছিল। তবে এই চারজন দারুণ করেছে।’
তরুণ খেলোয়াড়রা আস্থার প্রতিদান দিতে না পারলেও তাদের পাশে থাকছেন মাশরাফি, ‘তরুণ খেলোয়াড়দের একনাগারে দোষারোপ করা হয়। এটা ঠিক না। আমরা যারা সিনিয়র খেলোয়াড়, তারা যখন তরুণ ছিলাম তখন কিন্তু আমরা এতটা চাপ নিয়ে খেলিনি। তাই তাদের একতরফা দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা অনেক চেষ্টা করেছে।’ তরুণরা একসময় সাকিব-তামিমের মতো দলের নির্ভরতার প্রতীক হবে বিশ্বাস মাশরাফির, ‘এই মঞ্চ অনেক বড়, এখানে পারফর্ম করা সহজ নয়। আমি আশা করি তারা ধারাবাহিক পারফর্ম করে আজকের সাকিব-তামিম-মাহমুদউল্লাহর মতো ক্রিকেটার হবে।’ দলের সব ক্রিকেটার একসঙ্গে ফিরে আসেননি ঢাকায়। সাকিব থেকে যাচ্ছেন লন্ডনে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ইউরোপে ঘুরে বেড়াবেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়।
মেহেদী হাসান মিরাজও আসেননি। বিশ্বকাপের মাঝপথে তার স্ত্রী গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। স্ত্রীকে নিয়ে বেড়িয়ে কয়েকদিন পর দেশে ফিরবেন মিরাজ। সাব্বির রহমান আর লিটন দাসও থেকে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডে। এই চার ক্রিকেটার ছাড়া বাকিরা ফিরেছেন দেশে। আয়ারল্যান্ড সফর শেষে কয়েক দিনের জন্য দেশে ফিরেছিলেন মাশরাফি। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ইংল্যান্ডে যান তিনি। বিশ্বকাপের পুরোটা পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ডে কাটিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শুক্রবার সকালে স্ত্রী-সন্তানরা দেশে ফিরলেও মাশরাফি ফিরেছেন দলের সঙ্গে। এবারের বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচের ৮টিতে মাঠে নেমে তিনটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে বৃষ্টিতে। তাই সংগ্রহ ৭ পয়েন্ট। ১০ দলের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।