দেবীদ্বার সরকারি হাসপাতালে বাড়ছে দালাল দৌরাত্ম্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, উপজেলা প্রতিনিধি - দেবীদ্বার, কুমিল্লা
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ ২০২৪ ০৯:২৯ অপরাহ্ন
দেবীদ্বার সরকারি হাসপাতালে বাড়ছে দালাল দৌরাত্ম্য

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিন দিন বেড়েই চলেছে দালাল দৌরাত্ম। দালালদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। বাঁধা দিলে হতে হচ্ছে লাঞ্ছিত।


মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১ টায় সরকারি হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে এক শিশু রোগীকে মোঃ আক্তার হোসেন নামে এক দালাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। সেসময় তাকে বাঁধা দিতে আসা কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।


ঘটনার প্রত্যক্ষ দর্শিরা জানান, সকাল সাড়ে ১১টায় ১০ বছরের একটি ছেলে শিশু বাচ্চা রোগীকে তার মা জরুরী বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তাছলিমা আক্তার রোগীর অবস্থা দেখে বললেন, দুই হাত পচনের পরিমান বেশী হলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এসময় ইন্টার্নিশীপে কাজ করা এটেন্ডেন্ট বাছির উদ্দিনকে দু’হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দেখার জন্য বলেন। বাছির ব্যান্ডেজ খুলতে গেলে, দালাল আক্তার তাকে ঘুষি মারতে যায় এবং ব্যান্ডেজ খুলতে নিষেধ করে জোরপূর্বক রোগীকে নিয়ে যেতে চাইলে এসএসিএমও (সাকমো) ডাঃ মো. মিজানুর রহমান এসে বাঁধা দেন। এসময় দু’জনের মধ্যে চেয়ার উঠিয়ে এবং হাতাহাতি ও বাকবিতন্ডা শুরু হলে উপস্থিত লোকজন আক্তারকে জরুরী বিভাগ থেকে বের করে দেয়। বাহিরে এসে আবারো সাকমো মো. মিজানুর রহমানের উপর চড়াউ হয় আক্তার।


এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মো. কবির হোসেন আক্তারকে ডেকে বিষয়টা জানতে চাইলে, দালাল আক্তার (আরএমও) ডাঃ মো. কবির হোসেনকে সরে যেতে বলে ধাক্কাতে ধাক্কাতে লাঞ্ছিত করেন। সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিশন একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসার পূর্বেই দালাল আক্তার হোসেন পালিয়ে যায়। আক্তার হোসেন পৌর এলাকার ছোট আলমপুর গ্রামের রুহুল আমিনের পুত্র।


এ ব্যপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক চিকিৎসক, কর্মচারি ক্ষোভের সাথে বলেন, আমরা প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে দালাল চক্রের অত্যাচারে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। এর আগেও আক্তার এমন অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে এবং চিকিৎসককে লাঞ্চিত করেছে। দেবীদ্বারে ৩৮টি প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনেস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শতাধিক দালাল রয়েছে। রাতদিন ২৪ ঘন্টাই এদের উপস্থিতি হাসপাতাল ঘিরে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কয়েকটির মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় ওইসব প্রতিষ্ঠানের দালাল চক্র কাউকেই সমিহ করেনা। আক্তার হোসেনসহ একটি চক্র দির্ঘদিন যাবত হাসপাতালে আসা রোগিদের জোরকরে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা- নিরীক্ষাসহ ব্যবস্থা পত্রের ঔষধ ক্রয়ে সর্বশান্ত করে আসছে। এ ছাড়াও  হাসপাতালের রোগীদের টাকা, মোবাইলসহ মালামাল চুরির অভিযোগই নয় ওই চক্রের বিরুদ্ধে ইভটিজিং এরও অভিযোগ রয়েছে।


তারা আরো জানান, গত ১৫ দিন পূর্বে এরকম ঘটনায় বাঁধা দেয়ায় আক্তার হোসেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান স্যারকে পর্যন্ত লাঞ্ছিত করেছে। ওই ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার পূর্বক জেল হাজতে পাঠালেও দু’দিন পর একটি প্রভাবশালী চক্রের সহযোগীতায় আবারো ছাড়াপেয়ে এসে একই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


এ বিষয়ে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ মঞ্জুর হোসেন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বর্তমানে ঢাকায় আছেন, উনি আসলেই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান জানান, দালাল নির্মূলে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে, কিছুদিন পূর্বে একটি ঘটনায় আক্তার হোসেন নামে একজনকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। তিন দিনের মধ্যে সে বের হয়ে এসে ফের একই কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ঢাকায় ৩ দিনের ট্রেনিংয়ে আছি তাই ডা. মন্জুর হোসেনকে থানা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের  সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছি।