হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে খুন-চাঁদাবাজি-দখলবাজি ও মাদক ব্যবসায়িরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৯শে নভেম্বর ২০১৯ ০৮:৩৮ অপরাহ্ন
হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে খুন-চাঁদাবাজি-দখলবাজি ও মাদক ব্যবসায়িরা

আলোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ওয়াহিদুল আলম আরিফ গত কয়েকদিন ধরে তার বাহিনী নিয়ে গুলিস্তান পার্টি অফিসে মহড়া দিচ্ছি। সূত্রমতে, আসন্ন যুবলীগের ৭ম কংগ্রেসকে সামনে রেখে নিজের আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছেন আরিফ। জানা যায়, আরিফের অনুসারীদের তালিকায় অন্যতম আহম্মদ উল্লাহ মধু, আবু সাঈদসহ অনেকেই যারা মিল্কি হত্যার পর অফিসে আসত না ।তারা এখন মহড়া দিচ্ছে। আরিফের হঠাৎ এমন আগমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে তৃণমূলে।

দৈনিক প্রথম আলো ১৫ আগষ্ট ২০১৩ সূত্রে নিম্ন উল্লেখিত তথ্য জানা যায়- 

খুন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দখলবাজি, মাদক ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র রাখা ও পুলিশের ওপর হামলা—এ রকম নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নানা অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও হিমশিম খেতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য এই অভিযোগ মানতে রাজি নন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মো. আবদুল জলিল মণ্ডল। তিনি দাবি করেন, অপরাধে যুক্ত যুবলীগ কিংবা ছাত্রলীগ যে সংগঠনের সদস্যই হোক না কেন, কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গত ২৯ জুলাই রাতে গুলশানে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করার পর অপরাধ জগতের লোকদের যুবলীগের কমিটিতে স্থান পাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এই খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত হিসেবে চিহ্নিত যুবলীগের একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহিদ সিদ্দিকী ওরফে তারেক কদিন পর র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে রিয়াজুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন।

রিয়াজুল হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই মেজর রাশেদুল হক খান মিল্কি বাদী হয়ে গুলশান থানায় যে হত্যা মামলা করেন, তাতে যুবলীগের ১১ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন ওরফে চঞ্চল ও মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম ওরফে আরিফ অন্যতম। এই দুজনও রাজধানীর অপরাধ জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তাঁরা এখন পলাতক।

গত ১৭ জুলাই মিরপুর থানার মণিপুরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী জহিরুল ইসলামকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানায়, ছিনতাই ও ডাকাতির টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে নিজ দলের লোকদের হাতে তিনি খুন হয়েছেন। এ ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে থানায় ডাকাতির মামলায়ও রয়েছে। তিনি এখন কারাগারে। 

শাকিলের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে শ্যামপুর ও কদমতলী থানায় একাধিক জিডি আছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে ডিবি পুলিশ আগারগাঁও থেকে সাড়ে ১৬ হাজার ইয়াবা বড়িসহ যুবলীগের আমির হামজা ওরফে উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করে। তিনি যুবলীগের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে ওই কমিটি এখনো ঘোষণা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শেরেবাংলা থানা যুবলীগের নেতা মিজানুর রহমান।

ডাকাতি: ডাকাতি মামলায় কারাগারে আছেন যুবলীগের ঢাকা মহানগর কমিটির ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক আবদুল হান্নান। গত বছরের আগস্টে মানিকগঞ্জের ঘিওরে একটি ডাকাতির ঘটনায় তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদাবরে এক ব্যবসায়ীর বাসায় ডাকাতি করে ১২০ ভরি সোনা, টাকাসহ লুটের ঘটনা গ্রেপ্তার হন যুবলীগের সাত কর্মী। তাঁরা হলেন খোরশেদ আলম ওরফে সেলিম, মোস্তফা ওরফে রিংকু, শফিকুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, মনিরুজ্জামান, নিয়ামত আখলাক হোসেন ও আনিসুর রহমান। এঁরা সবাই পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

মামলার বাদী ফরহাদ আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক চাপে পড়ে তিনি মামলার খোঁজ নেওয়া থেকে সরে এসেছেন।

মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার বাকী বিল্লাহ জানান, গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে ডাকাতিতে জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

অস্ত্র মামলা: গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লালবাগ থানা যুবলীগের কর্মী সাগর আহমেদ অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় পুলিশের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, সাগরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এভাবে একের পর এক অপরাধে জড়িয়ে পড়ার দায় নিতে রাজি নন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি দাবি করেন, যাঁদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসছে, সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত অনেকেই প্রকাশ্যে রাজনীতির মাঠে বিচরন করলেও, কেউ কেউ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে যার ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানকে প্রশ্নবৃদ্ধ করতে কোনো চক্রের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের হঠাৎ আগমন কিনা তা নিয়েও ভাবছে নেতাকর্মীরা। ‍সূত্র: প্রথম আলো

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব