ঘরে মৃত্যুর ভয়, আশ্রয়কেন্দ্রে হারানোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ৯ই নভেম্বর ২০১৯ ০৮:২৯ অপরাহ্ন
ঘরে মৃত্যুর ভয়, আশ্রয়কেন্দ্রে হারানোর

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সর্বশেষ ইউনিয়ন সাউথখালী। বেলেশ্বর নদীর নিকটতম এ জনপথের মানুষ ভৌগলিক কারণে জন্মের পর থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বেঁচে থাকে। তারপরও ঝড় জলচ্ছাসে স্বজন ও অর্থ সম্পদ হারানোর ভয়ে সব সময় আতঙ্কিত থাকতে হয় তাদের। এ জনপথের মানুষ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঝড় সিডরে। তারপর থেকে এ এলাকার মানুষের দাবির কেন্দ্রবিন্দু ছিল বলেশ্বর নদীর কোল ঘেষা বগী থেকে মোরেলগঞ্জের সন্নাসী পর্যন্ত একটি টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মান।

জনগণের দাবি অনুযায়ী, একটু দেরিতে হলেও ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারিতে বেরিবাঁধ ও সুইচগেট নির্মানের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে বাঁধের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও আতঙ্ক কাটেনি সাউথখালী বাসীর। কারণ নদী শাসন না করার জন্য সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, গাবতলা ও দক্ষিন সাউথখালী এলাকা থেকে বারবার ভেঙ্গে যাচ্ছে ভেড়িবাঁধ। প্লাবিত হচ্ছে লোকালয়।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল‘র খবরে এ এলাকার মানুষের আতঙ্ক বেড়েছে কয়েকগুন। বুলবুল আঘাত হানলে, ভেড়িবাঁধ ভেঙে বা উপচে পানি চলে আসবে লোকালয়ে। এ অবস্থায় ঘরে থাকলে পানিতে ডুবে মরতে হবে, আর আশ্রয় কেন্দ্রে গেলে গবাদী পশু ও মূল্যবান সম্পদ হারাবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে কেউ কেউ সম্পদের মায়া ত্যাগ করে যেতে শুরু করেছে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে সে সংখ্যা খুবই কম। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রেরও সংকট রয়েছে এই ইউনিয়নে। এদিকে শনিবার দুপুরে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী এলাকায় ঝুকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজজামান খানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

বগী গ্রামের রাজ্জাক তালুকদার বলেন, সিডরে মরেছে আত্মীয় স্বজন। বুলবুলের কথা শুনেই আতঙ্কে আছি। সন্তানদের আত্মীয় বাড়িতে পাঠিয়েছি। আশ্রয়কেন্দ্রে এত লোক থাকবে কিভাবে।'

স্থানীয় নূর ইসলাম, আব্দুর রবসহ কয়েকজন বলেন, ভেড়িবাঁধটির এমন অবস্থা যে একটু পানি বেশি হলেই কোন না কোন জায়গা থেকে ভেঙ্গে যায়। বুলবুল‘র কারণে ভেড়িবাঁধ ভাঙ্গলে আমাদের খুব খারাপ অবস্থা হবে। গরু, ছাগল, হাস-মুরগীতো ভেসে যাবেই। মানুষেরও প্রাণহানী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইউপি সদস্য হালিম সাহ বলেন, বগী, গাবতলা ও দক্ষিণ সাউথখালীর কয়েকটি জায়গায় বাঁধটি খুবই ঝুকিপূর্ণ। তাই এলাকার মানুষ খুবই আতঙ্কে রয়েছে। রাতে যদি হঠাৎ বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢোকে তখন মানুষের কিছু করার থাকবে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বগী, দক্ষিণ সাউথখালী ও গাবতলা এলাকার ভেড়িবাধের অবস্থা খুব একটা ভালনা। বুলবুল আঘাত হানলে এ ভেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকবে। মানুষের অপূরনীয় ক্ষতি হবে।

প্রাণহানিরও শঙ্কা রয়েছে।ইউনিয়নের সবাইতো আর আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পাবে না। তবে বগী, দক্ষিণ সাউথখালী ও গাবতলা এলাকারে অধিক সংখ্যক মানুষ যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারে সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজজামান খান বলে, স্থানীয়রা বাঁধের যে জায়গাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে, আমরা সে এলাকা পরিদর্শণ করেছি। ৫ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত পানি হলেও কোন সমস্যা হবে না। পানির পরিমান এর থেকে বেশি হলে সমস্যা হতে পারে। তবে বাঁধের কোথাও যদি কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাহলে এক ঘন্টার মধ্যেই সংস্কার কাজ শুরু করা যাবে। সে অনুযায়ী আমরা স্কেভেটরসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল প্রস্তুত রাখার কথা জানান তিনি।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব