ছেলেকে বাঁচাতে আইসিইউ ছেড়ে মৃত্যুর কোলে মা

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশেষ প্রতিবেদক - স্বাস্থ্য বিভাগ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৯শে জুলাই ২০২১ ১২:০০ অপরাহ্ন
ছেলেকে বাঁচাতে আইসিইউ ছেড়ে মৃত্যুর কোলে মা

করোনা আক্রান্ত শিমুল পাল (৩৫) শ্বাস নিতে পারছিলেন না। একই হাসপাতালে মুমূর্ষ অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন মা কানন প্রভা পাল (৬৫)। মায়ের কানে খবর যেতেই ছটফট শুরু করে দেন তিনি। কিন্তু প্রয়োজন থাকলেও শয্যা খালি না থাকায় ছেলেকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা।


এই কথা জেনে নিজের হাতে লাইফ সাপোর্টের সরঞ্জাম খুলে ছেলেকে আইসিইউতে আনতে চিকিৎসকদের ইশারা করেন তিনি। পরে অনেকটা বাধ্য হয়েই মাকে আইসিইউ বেড থেকে নামিয়ে ছেলেকে সেখানে নিয়ে আসা হয়।


এদিকে আইসিইউ থেকে নামানোর এক ঘণ্টার মাথায় মা কানন প্রভার মৃত্যু হয়। আর ছেলে শিমুল এখন মায়ের আইসিইউ শয্যায় থেকে করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন।


ঘটনাটি ঘটে ২৭শে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালটির করোনা ইউনিট প্রধান ডাক্তার রাজদ্বীপ বিশ্বাস মানবজমিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


ডা. রাজদ্বীপ বলেন, সপ্তাহখানেক আগে শহরের দেওয়ান বাজারের সিঅ্যান্ডবি কলোনির বাসিন্দা কানন প্রভা পাল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এখানে ভর্তি করানো হয়।


কয়েকদিন পর তার ছেলে শিমুল পালের শরীরেও করোনা শনাক্ত হলে এখানে আনা হয়। এরমধ্যে মা কানন প্রভাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছিল। মঙ্গলবার শিমুলের শারীরিক অবস্থারও অবনতি হয়। তারও আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোথাও আইসিইউ বেড পাওয়া যাচ্ছিল না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ ছিলো না।


তিনি বলেন, হাসপাতালের বেডে থেকে এমন খবর শুনে তিনি পাশে থাকা নার্সকে ইশারা করেন নিজের আইসিইউ বেডটা ছেলেকে দিতে। পরে তার জোরাজোরিতে পরিবারের অন্য সদস্যাদের সম্মিতিতে তাকে কেবিনে পাঠিয়ে ছেলেকে আইসিইউ বেডে আনা হয়। এর কয়েকঘন্টা পর এই মমতাময়ী মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ছেলে শিমুল পালের অবস্থারও এখনো উন্নতি হয়নি।


উল্লেখ্য, ঈদের ছুটিতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মুমূর্ষু কোভিড রোগীদের শেষ ভরসা আইসিইউ শয্যারও সংকট দেখা দিয়েছে। আইসিইউ খালি হলেই নিজের রোগীকে ভর্তি করাতে এখানে চলছে প্রতিযোগিতা। সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে এখানে ১৫৭টি আইসিইউ বেড থাকলে সবগুলো অধিকাংশ সময় পূর্ণ থাকছে।


বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত কয়েকটি বেড খালি পাওয়া গেলেও সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেড যেন এখানে সোনার হরিণ হয়ে উঠেছে। একটি সিটের বিপরীতে ১০-১২ জন সিরিয়ালে থাকছেন সেখানে।