জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মই দৌড় খেলা উপভোগ করতে হাজারো মানুষ ভিড় করেছেন। ইসলামপুরের পার্থশী ইউনিয়নের পূর্ব গামাড়িয়া এলাকায় স্থানীয় কৃষকদের আয়োজনে পাঁচ দিনব্যাপী এই খেলার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৭ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই খেলায় ১০টি দল অংশগ্রহণ করে, যেখানে আজকের ফাইনালে জয়ী হয় আগুনের চরের পাঙ্খা আলীর দল।
প্রতিযোগিতার আকর্ষণীয় পুরস্কারের মধ্যে ছিল ফ্রিজ, এলইডি টিভি এবং অন্যান্য সান্ত্বনামূলক পুরস্কার। খেলা দেখতে আসা হাজারো মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপস্থিতি, খেলার পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। খেলা উপভোগ করতে আসা সাকিব নামে একজন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খেলার ঘোষণা পেয়ে সময়মতো মাঠে উপস্থিত হয়েছি। এত বড় বড় ষাঁড়ের দৌড় আগে কখনো দেখিনি।
নারী দর্শক রুপালী আক্তার বলেন, নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যর সঙ্গে পরিচিত করাতে এবং মাদক থেকে দূরে রাখতে এ ধরনের আয়োজন জরুরি। এই খেলাগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে, তাই এটি দেখে আনন্দিত। আরেক দর্শক হিরা মনি বলেন, আগে বাবা-দাদার কাছ থেকে মই দৌড়ের গল্প শুনেছি, কিন্তু প্রথমবার সরাসরি খেলা দেখে দারুণ লেগেছে।
এই ঐতিহ্যবাহী খেলায় অংশগ্রহণকারী ইসমাইল হোসেন বলেন, এটি আমাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এতে অংশ নিয়ে খুবই ভালো লেগেছে। খেলার আয়োজন স্থানীয়দের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ও চেতনা সৃষ্টি করেছে।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মো. সোহেল রানা খোকন বলেন, ৫০ বছর পর এ অঞ্চলে এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে। দর্শকদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে আমরা আনন্দিত। ভবিষ্যতেও এই খেলা প্রতিবছর আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে এ ধরনের আয়োজন আরও বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ খেলা শুধু আনন্দই দেয় না, বরং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করে। এটি শুধু খেলা নয়, বরং এক সময়ের কৃষি নির্ভর সমাজের জীবনধারার একটি প্রতিচ্ছবি। জমকালো এই আয়োজনের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার যে প্রচেষ্টা, তা প্রশংসার দাবি রাখে।
মই দৌড় খেলা দেখতে আসা মানুষের ঢল প্রমাণ করে, এ ধরনের ঐতিহ্যবাহী খেলা এখনো মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই আয়োজনগুলো অব্যাহত থাকলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় বাসিন্দারা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।