প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪১
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এশিয়া কাপ চলাকালীন রমরমা ক্রিকেট জুয়ার খেলা দেখা যাচ্ছে। ২০১৫-১৬ সাল থেকে প্রকাশ্যে শুরু হওয়া এই জুয়া শুরুতে হালকা মজার জন্য হলেও এখন পেশাদারী আকার নেয়। বুধবার রাতে সরাইলের একটি চায়ের দোকানে বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার ম্যাচ ঘিরে বাজি ধরার দৃশ্য নজর কেড়েছে। একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি ওই ম্যাচে ১০ হাজার টাকা বাজি ধরেছিলেন, তবে বাংলাদেশ দলের হারের কারণে লোকসান হয়েছে।
সরাইল উপজেলা সদর এবং গ্রামাঞ্চল সর্বত্রই ক্রিকেট জুয়া রমরমা। আগে শহর এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। জুয়ায় স্কুল কলেজ পড়ুয়া যুবক, বিদেশ ফেরত এবং বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষও জড়িত। এমনকি অনাক্ষররাও মোবাইলে বাজি ধরছেন। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি হয়ে থাকে। এই জুয়ার নেশায় পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় ডিলারদের ছত্রছায়ায় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারের মাধ্যমে বাজি নেওয়া হয়। সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের দোকান ও মোড় থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত জুয়া চালানো হয়। এশিয়া কাপ, আইপিএল বা বিপিএলের সময় চায়ের দোকানগুলোতে খেলা দেখার ধুম পড়ে। অধিকাংশ খেলোয়াড়েরা ক্রিকেটের বিস্তারিত জানে না, কেবল চার, ছক্কা এবং আউটের বিষয়গুলোই জানে।
দুবাইতে চলা এশিয়া কাপকে কেন্দ্র করে জুয়ার মৌসুম পুরো কার্যক্রমে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, প্রতি রাতে ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকার জুয়া চলে। বড় ডিলাররা মোবাইলের মাধ্যমে অর্ডার গ্রহণ করে এবং বিজয়ীদের যথাযথ পরিশোধ নিশ্চিত করে। তারা হাজারে ১০০ টাকা কমিশন নিয়ে পরিচালনা করেন।
পর্দার পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালীরাও জুয়ার সঙ্গে জড়িত। অনেক ডিলার লাখ লাখ টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। অপরদিকে জুয়ার নেশায় ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ নগদ টাকা থেকে শুরু করে বাড়ির আসবাবপত্র ও গহনা পর্যন্ত বাজি ধরছেন। পরিবারের সদস্যরাও এ নেশায় বিপাকে পড়েছেন এবং সামাজিক অশান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে জুয়া খেলার খবর পাওয়া গেছে, তবে প্রমাণের অভাবে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে। তদন্তে দেখা গেছে, জুয়ার অর্থ লেনদেনের জন্য এডমিনদের কাছে ১০ থেকে ১৫টি করে বিকাশ, রকেট ও নগদ মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বার রয়েছে।
এই পরিস্থিতি স্থানীয়দের কাছে জুয়াকে একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে রূপ নিয়েছে। সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ না নিলে জুয়ার নেতিবাচক প্রভাব আরও বিস্তৃত হবে।