প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১১:৩১
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার সাইলচর গ্রামে ঘটে গেছে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ঘুমন্ত অবস্থায় এক নারীকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে। নিহত নারী ঝরনা বেগম (৪৮) ছিলেন ইলেকট্রিক মেকানিক আব্দুল করিমের স্ত্রী। ঘটনার পর তার প্রবাসী ছেলে সৌদি আরব থেকে ফিরে দেশে এসে দেবীদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার সূত্র ধরে পুলিশ ঝরনা বেগমের স্বামী ও তার পরকীয়া প্রেমিককে আটক করে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রাথমিকভাবে প্রেমিক দেলোয়ার হোসেন ও স্বামী আব্দুল করিমকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রেমিক দেলোয়ার স্বীকার করেন, নিহত নারীর সঙ্গে তার দীর্ঘ ১০ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনও চলছিল। তিনি জানান, এই আর্থিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুদিন ধরে মতবিরোধ চলছিল, যা হয়তো ঘটনার পেছনে প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে, স্বামী করিম জানান, স্ত্রী ও তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল এবং তারা আলাদা ঘুমাতেন।
স্বামী করিম জানান, ঘটনার দিন তিনি স্ত্রী প্রদত্ত ঘুমের ওষুধ খাননি। তবে ঝরনা বেগম সেদিন এলাট্রল ট্যাবলেট গ্রহণ করেছিলেন। পুলিশ জানায়, দুজনেই অসংলগ্ন কথা বলায় এবং ঘটনার সঙ্গে তাদের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে পুলিশ তাদের কুমিল্লা কোর্ট হাজতে পাঠায়।
স্থানীয়রা ধারণা করছেন, পরকীয়ার জেরে ঝরনা বেগমের সঙ্গে প্রেমিক দেলোয়ারের বিরোধ সৃষ্টি হয়, যা হয়তো হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে। আবার কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, পরকীয়া সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ স্বামীই হয়তো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কেউ দায় স্বীকার করেননি, তবে পুলিশ তাদেরকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
দেবীদ্বার থানার ওসি শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, প্রাথমিক তদন্তে প্রেমিক ও স্বামীর উভয়ের বিরুদ্ধেই সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া গেছে। তারা সরাসরি খুনের দায় স্বীকার না করলেও তাদের জবানবন্দি অসংলগ্ন হওয়ায় বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাতে। নিহত ঝরনা বেগম তার নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব এই ঘটনায় নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়দের মতে, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়।
বর্তমানে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং পুলিশ আশা করছে, জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। নিহত নারীর ছেলে শরিফ বিচার দাবি করে বলেছেন, “আমি আমার মায়ের খুনির উপযুক্ত শাস্তি চাই, সে যতই কাছের হোক না কেন।”