প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১২:৪০
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের মানুষদের কাছে তিনি ছিলেন শেষ আশ্রয়, পরিচিত ছিলেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে। প্রায় পাঁচ দশক ধরে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কবর খনন করে আসা মো. মনু মিয়া শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দিন ঠাকুর এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
মনু মিয়া ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি বিনা পারিশ্রমিকে প্রায় তিন হাজার মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খনন করেছেন। এই মহান কাজে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কারও অনুরোধ উপেক্ষা না করে বর্ষা-বাদল উপেক্ষা করে ছুটে গেছেন মৃতের বাড়িতে। তার একমাত্র সহচর ছিল একটি ঘোড়া, যেটি কিনতে তিনি নিজের দোকান বিক্রি করেছিলেন।
ঢাকার আইনজীবী রোকন রেজা, যিনি এই এলাকারই সন্তান, জানান—সম্প্রতি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় দুর্বৃত্তরা মনু মিয়ার সেই প্রিয় ঘোড়াটিকে হত্যা করে। এতে তিনি ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। মনু মিয়া বলেছিলেন, তিনি কাজ করেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য নয়।
এই ঘটনার পর থেকেই তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও আর আগের মতো হয়ে উঠেননি। শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে তার মৃত্যু হলে এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, তিনি শুধু একজন কবর খননকারী ছিলেন না, ছিলেন মানবতার প্রতীক। তাঁর মতো মানুষ সমাজে বিরল। মৃত্যুর পরও তার দোয়া ও ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন তিনি।
প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর বলেন, মনু মিয়া ছিলেন আমাদের এলাকার দয়ার সাগর। তিনি কখনো কারও কাছ থেকে কিছু চাননি, বরং নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এমন মানুষ বারবার জন্মায় না।
গ্রামের মানুষ এখনো বিশ্বাস করে, শেষ বিদায়ের এই কারিগর তাদের অন্তিম মুহূর্তেও বেঁচে থাকবেন সবার স্মৃতিতে। তাঁর শূন্যতা যে কত বড় তা বোঝা যাবে পরবর্তী কোনো জানাজায়, যখন কেউ বলবে, মনু মিয়া নেই।
তার জীবন ও কর্ম আমাদের সকলের জন্য এক উদাহরণ হয়ে থাকবে, যেখানে সেবা ছিল বিনিময়ের ঊর্ধ্বে এবং ভালোবাসা ছিল চিরস্থায়ী।