ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নে পুলিশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে হত্যামামলার আসামির বাবা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে অতিথির আসনে বসানোকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ প্রশাসন। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুলিশের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন বালিয়াডাঙ্গী-রাণীশংকৈল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার স্নেহাশীষ কুমার দাস। তার পাশে বসে আছেন বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকার, জামায়াত ও বিএনপির কয়েকজন নেতা এবং হত্যামামলার আসামি বকুলের বাবা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সামশুল হক।
উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ আবু রায়হানের বাবা ফজলে ওরফে রাসেদ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বকুল ৫১ নম্বর আসামি। বকুলের বাবা সামশুল হক ও তার অপর ছেলে নাসিরুল ইসলামও নানা মামলায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। নাসিরুল বর্তমানে একটি জমি দখল, হত্যাচেষ্টা ও চাঁদাবাজির মামলার অন্যতম আসামি।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "যেখানে একজন ছাত্র হত্যার মতো গুরুতর মামলায় পরিবারের সদস্য জড়িত, সেখানে তার বাবাকে পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অতিথির আসনে বসানো শুধু অনভিপ্রেত নয়, বরং জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদের প্রতি চরম অবমাননা।"
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জামায়াত নেতা ইলিয়াস আলী বলেন, “পুলিশ যাদের চায়, তাদেরই ডাকে। কে আসামি আর কে নির্দোষ, সেটা তাদের যাচাই করার দায়িত্ব। তবে বিষয়টি জানার পর আমারও খারাপ লেগেছে।”
জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকার বলেন, “হত্যা মামলাটি যেহেতু সদর থানায়, তাই আমি অবগত ছিলাম না। আপনি আগে বললে জানতাম। অন্য থানার মামলার আসামি বা তার স্বজন সম্পর্কে সবসময় আমাদের কাছে তথ্য থাকে না।”
একই মন্তব্য করেন সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার স্নেহাশীষ কুমার দাস। তিনি বলেন, “জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক দৃঢ় করতেই ওপেন হাউস ডে’র আয়োজন। এই ঘটনায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এত আলোচিত একটি মামলার আসামির পরিবারের সদস্য অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হওয়াটা কেবল অসাবধানতাই নয়, বরং দায়িত্বহীনতার বড় উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং অনেকে দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।