পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ৮টি গ্রামে মুসল্লিরা এবারও সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। এই ঐতিহ্যটি ২০০ বছর ধরে অনুসরণ করে আসছে স্থানীয় বাসিন্দারা। জাহাঁগিরিয়া শাহসূফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের অনুসারীরা প্রতি বছর সৌদি আরবের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ঈদ পালন করেন।
রাঙ্গাবালীর এসব গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে একদিনে রোজা শুরু এবং ঈদ উদযাপন করার পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এই গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে নিজহাওলা, পশুরবুনিয়া, চরযমুনা, উত্তর পশুরিবুনিয়া, সেনেরহাওলা, কাছিয়াবুনিয়া, ফুলখালী এবং কোড়ালিয়া। দরবার শরিফের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে, বিশ্বের যেকোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলে তা ইসলামের ঐক্যের অংশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
এ বছরের ঈদেও রাঙ্গাবালীর এই গ্রামের মুসল্লিরা ঐতিহ্যবাহীভাবে একই দিনে রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। ঈদের সকালে গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজে অংশ নেন। এরপর একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাতে কোলাকুলি করেন এবং ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
ইউসুফ আলী সিরাজুল নামে একজন দরবার শরিফের অনুসারী জানান, "ঈদ উপলক্ষে রাঙ্গাবালীর এসব গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ঈদের দিন সবাই একত্রিত হয়ে ঈদের জামাতে অংশ নিচ্ছেন এবং একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।" তিনি আরও বলেন, "এটি শুধু রাঙ্গাবালীতে নয়, দেশের অন্যান্য স্থানে এভাবে ঈদ উদযাপন করা হয় এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে আমাদের ঈদ উদযাপন ঐক্যের প্রতীক।"
এই ঐতিহ্য অনুসারে ঈদ উদযাপন শুধু রাঙ্গাবালীর গ্রামগুলিতেই সীমাবদ্ধ নয়, দেশের আরও বিভিন্ন স্থানে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ পালন করা হয়। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, যখন সৌদি আরবের চাঁদ দেখা যায়, তখন তারা রোজা শুরু করেন এবং ঈদ উদযাপন করেন।
এ ধরনের ঈদ উদযাপন বাংলাদেশের ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি বিশেষ দিক হিসেবে বিবেচিত হয়, যা ইসলামিক ঐক্যের প্রতীক। রাঙ্গাবালীর দরবার শরিফের অনুসারীরা ভবিষ্যতেও এই ঐতিহ্য ধরে রাখার কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া, ঈদ উদযাপন উপলক্ষে গ্রামের প্রতিটি মানুষের মধ্যে আনন্দ এবং সৌহার্দ্য সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের দিনে গ্রামগুলোতে বিশেষ এক ধরনের সমবেদনা এবং বন্ধুত্বের পরিবেশ বিরাজ করছে।
এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলো ইসলামিক ঐক্যের পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনও মজবুত করে। রাঙ্গাবালীর মুসল্লিরা একত্রিত হয়ে ঈদ উদযাপন করে একটি সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে থাকে, যা সবার মধ্যে এক ধরনের খুশির সঞ্চার করে।
সব মিলিয়ে, রাঙ্গাবালীর এই ৮টি গ্রামে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন একটি বিশেষ ঐতিহ্য হিসেবে টিকে আছে এবং তা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে, এমনটি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।