
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১:৩

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-১ আসনের (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) জয়-পরাজয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উন্নয়ন বৈষম্য, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও দলীয় কোন্দল। এই আসনটি নাগেশ্বরী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
স্বাধীনতার পর এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টি জয়লাভ করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি পৃথকভাবে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ হলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির রয়েছে একক প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আসলাম হোসেন সওদাগর ছাড়াও দলটির নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম মাজু, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক এমপি একেএম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, বিএনপি থেকে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সম্পাদক ও সাবেক এমপি সাইফুর রহমান রানা এবং জাকের পার্টি থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাষ্টার মনোনয়ন প্রত্যাশী।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও সমমনা রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও দলীয় সমাবেশে যোগ দিয়ে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই মামলা হামলার কারণে নিস্ক্রিয় ও আত্মগোপনে রয়েছেন।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বেশ কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনের জয়-পরাজয় নির্ধারণে উন্নয়ন বৈষম্য, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও দলীয় কোন্দল ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
তারা আরও জানান, নাগেশ্বরীতে পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ, মডেল মসজিদ, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, রাস্তা-ঘাট নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ভূরুঙ্গামারীতে এসবের কোনটিই হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, এই আসনের জন্য চলতি অর্থ বছরের প্রথম পর্যায়ের কাবিটার বরাদ্দ ছিল এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা, কাবিখার বরাদ্দ ছিল ৬৩ মেট্রিক টন করে চাল ও গম। এছাড়া টি.আর বরাদ্দ ছিল এক কোটি ১৪ লাখ টাকা। বরাদ্দের অধিকাংশই নাগেশ্বরীতে দেওয়া হয়েছে। ভূরুঙ্গামারীতে শুধুমাত্র টি.আরের ৩০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত অর্থ বছরগুলোর বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম বৈষম্য করা হয়েছে। এসব কারণে ভূরুঙ্গামারীর ভোটারসহ জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
এছাড়া নাগেশ্বরীর কচাকাটা থানাকে উপজেলায় রূপান্তর না করায় সেখানকার মানুষের মধ্যে এক ধরণের ক্ষোভ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় দলের অভ্যন্তরে কোন্দল ও গ্রুপিং রয়েছে। দলীয় কোন্দল আর একাধিক প্রার্থী থাকায় এ আসনে আওয়ামী লীগ অনেকটাই অগোছালো।
এছাড়া দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দলটির স্থানীয় কতিপয় নেতাকর্মীর ক্ষমতা অপব্যবহারের কারণে তাদের ওপর ক্ষুব্ধ দলের ত্যাগী নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের অনেকে। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে তাদের ধারনা।
এছাড়া জেলা বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে কোন্দল রয়েছে। সেই কোন্দল উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। অপরদিকে হারানো আসন পুনরুদ্ধার করতে চায় জাপা।