প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১:৪৭
সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। আর মাত্র কয়েক দিন পর শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু। এই উৎসবকে ঘিরে দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে মন্দিরে মন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। আগের চেয়ে কাজ বাড়লেও ব্যয় বাড়ায় তারা খরচ নিয়ে শঙ্কিত। এবারে উপজেলায় ২১ টি মন্দিরে শারদীয় দূর্গা পূজা উদযাপন করা হবে। তবে গতবারের চেয়ে এবার ভালোভাবে পূজা উদযাপনের আশা মন্দির কমিটির।
আগামী ১৪ অক্টোবর (২৬ আশ্বিন) মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা।
জানা যায়, দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয় মহালয়ার দিন থেকেই। তবে আগামী ২০ অক্টোবর (২ কার্তিক) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে সূচনা এবং ২৪ অক্টোবর(৬ কার্তিক) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দেবী দুর্গা চলতি বছরের ২০ অক্টোবর ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে মহা ষষ্ঠীর দিনে পৃথিবীতে আসবেন, মহিশ অসুর কে বধ করার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সকল দুর্গতি নাশ করে ২৪ই অক্টোবর দশমির মহাপ্রলয়ের দিনে দোলায় চড়ে আবার স্বর্গে ফিরে যাবেন। পাঁচ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠেয় পূজায় উপজেলার হাজার হাজার ভক্ত ও পণ্যার্থী শারদীয় দূর্গা উৎসব পালন করবে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। অনেক মন্দিরে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে রং তুলির আচঁড় দিচ্ছে। কেউ প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ শেষ করে এরপর প্রতিমা শুকানোর কাজ করছে। তারপর দুর্গাপূজার শুরুর আগ মহূর্তে নিপুণ শিল্পীর কারুকাজে রং তুলির আচঁড় দিয়ে প্রতিমাগুলোকে প্রাণবন্ত করা হবে। দেবী দুর্গার প্রতিমা ছাড়াও কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী, অসুর, মহিষাসুরসহ মোট ১২ টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন মৃৎশিল্পীরা।
উপজেলার সাদুড়িয়া রাজ নারায়নশাহ সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের প্রতিমা তৈরীর কারিগর কনক চন্দ্র মহন্তের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, গত ১৮ বছরের উপর প্রতিমা তৈরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে আসছি। মা দূর্গাকে মন থেকে ভালবাসে অনেক যত্ন সহকারে তৈরি করি এই প্রতিমা। দুই সপ্তাহ আগে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু করলেও বর্তমানে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এরপর প্রতিমাগুলো শুকানো হচ্ছে। শেষ মহূর্তে রংতুলির আঁচড়ে প্রতিমা গুলোকে জীবন্ত রুপে ফুটিয়ে তোলা হবে। এক একটি মন্দিরে প্রতিমা তৈরীতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিচ্ছেন কনক। বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি। তারপরও সব কিছু কাটিয়ে সেরা কাজ উপহার দিতে পারবেন বলে আশা করেন কনক।
প্রতিমা তৈরির আরেক কারিগর শিবরাম চন্দ্র বলেন, আমার দাদু প্রতিমা তৈরি করতেন। তারই শিক্ষায় আমি প্রতিবছর প্রতিমা তৈরির কাজ করে থাকি। এবার সবাই ভালোভাবে পূজার প্রস্তুতি নিয়েছেন। যে কারণে কাজ বেড়েছে। এবার হিলিতে আমি ৮ টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। কমিটির লোকজনের চাহিদা অনুযায়ী এবার প্রতিমার আকার ও ডিজাইনে ভিন্নতা এসেছে। বর্তমানে আমরা মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি কাজ শেষ করছি। এখন প্রতিমা শুকানোর জন্য রেখে দিয়েছি। আবার অনেক মন্দিরে প্রথম বারের রং তুলির আচঁড়ের কাজ শুরু হয়েছে। পূজা শুরুর আগ মহূর্তে শেষ রং তুলির আচঁরে প্রতিমাগুলোকে প্রাণবন্ত করা হবে।
পৌর শহরের চন্ডিপুর সার্বজনীন মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির নেতা ও কাউন্সিলর অলক কুমার বসাক (মিন্টু) বলেন, গত দুই তিন বছর করোনার কারণে আমরা সীমিত আকারে দুর্গাপূজা উদযাপন করেছি। এবার যেহেতু করোনার প্রকোপ নেই, তাই ভালোভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের মন্দিরে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে প্রথম বারের মতো রং তুলির আচঁড়ে প্রতিমাকে সাজানো হয়েছে। পূজার আগ মহূর্তে শেষ বারের মতো রং তুলির আচঁড়ে ও পোশাক পড়িয়ে প্রতিমাকে প্রাণবন্ত করে তোলা হবে। এবারে আমাদের প্রতিমা তৈরির ব্যয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে। আমাদের এখানে বরাবরই ভালোভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়। কোনও ধরনের সমস্যা হয় না।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে এ বছর দিনাজপুর জেলার ১৩ উপজেলায় ১৩০৭ টি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপুজা। আগামী ২০ অক্টোর ষষ্টীপুজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দ্বীপংকর শাহা রিপন বলেন, এবারে আমাদের উপজেলায় ২১টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। মন্দিরে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দুর্গোৎসব পালনের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
শারদীয় দুর্গা উৎসব চলাকালীন সময়ে আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছায়েম মিয়া বলেন, এবার উপজেলায় মোট ২১টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বেশীরভাগ মন্দিরে দেবী তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও বিটে আমাদের বিট অফিসার রয়েছে। নিয়মিতভাবে তারা কমিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারে, এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্গাপূজার সময় কোন অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটে এর জন্য টহল পুলিশ, পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি।