
পানির মধ্যে মসজিদ, প্রতিদিন যেতে হয় নৌকাযোগে

প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৫৪

টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল।রাস্তাঘাটও তলিয়ে যাচ্ছে বানের পানিতে।কিন্তু একটি মসজিদ তলিয়ে না গেলেও মসজিদের চারপাশে পানি আর পানি।ভোরে কাক ডাকতে না ডাকতেই তাদেরকে নৌকাযোগে পার হয়ে যেতে হয় মসজিদে।এভাবে দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে এই পথ পাড়ি দিতে হয় তাদের।রোদ,বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই যেতে হয় তাদের।এমনকি রাতের বেলাও ঠিক একই রকম চিত্র দেখা যায়।ধর্মভীরুতার নজিরবিহীন এরুপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়া এবং কুকাদাইর (একঅংশের) এলাকার বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী জানায়,১৯৭০ সালে চিতুলিয়া এলাকায় মসজিদটি স্থাপিত হয়।কিন্তু নদীভাঙনের কবলে পড়ে ২০০৮ সালে মসজিদটি স্থানান্তরিত করা গ্রামের একবারে পূর্বপাশে। যমুনার বেড়িবাঁধের পূর্বপাড়ে মুসুল্লিদের বসবাস হলেও পশ্চিম পাড়ে নদীর কিনারে বর্ষাকালে নৌকাযোগে নামাজ আদায় করতে যেতে হয় মুসুল্লিদের।টানা১৩ বছর ধরে এহেন কষ্টের যেন অন্ত নেই তাদের।প্রতিবছর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় নিচু রাস্তাটি।কোনো কোনো বছর মসজিদের বারান্দায় পানি প্রবেশ করে।কিন্তু গত বছর এলাকাবাসী মসজিদ ঘরটি উচু করে। তারপরও মসজিদে পানি প্রবেশ না করলেও তাদেরকে পথ পাড়ি দিতে হয় নৌকাযোগে।তাদের আর্তনাদের যেন শেষ নেই।

এই গ্রামগুলোর মানুষ নেহায়েত গরীব।কেউ কৃষি কাজ করে, কেউবা নৌকা চালায়,আবার কেউ কেউ নদীতে মাছ ধরতে যায়।তাদের জমানো টাকা দিয়ে তিল তিল করে গড়া মসজিদে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে যেতে পারে না।টিন দিয়ে তৈরি মসজিদের যত্নের কোনো ঘাটতি রাখে না তারা মসজিদ ভবনটি দালানের তৈরি না হলেও তাদের মমত্ব ও ভালোবাসার কমতি নেই।
তাদের নিজস্ব কোনো নৌকা নেই।তাই নৌকার জন্য অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হয় তাদের।সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় এশা ও ফজরের নামাজ আদায় করতে। কখন আসবে কাঙ্ক্ষিত সেই পারাপারের যানবাহন, তারা কী ঠিক সময়ে পৌঁছে তাদের আত্মাকে প্রশান্তি দিতে পারবে? এমন প্রশ্ন জাগে মুসুল্লিদের মনে।তবুও মন মানে না,তাদের এই ছুটে চলা যেন স্রষ্টা ভীতির উদাহরণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।মো. হুরমুজ প্রামাণিক (৬৫) বলেন,বহু কষ্ট কইরা মরছিদ করছি বাপু।এইডার প্রতি মায়া বেশি।টাকার অভাবে আমরা রাস্তা করবার পারি নাই।কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি নৌকা পার হইয়া।আমগোর দেখার কেউ নাই।

আঃ হালিম (৩৫) বলেন,"মাছ বিক্রি কইরা সংসার চালাই।আমগোর সমাজের মানুষ একবারেই গরীব কিন্তু আমরা কখনো নামাজ বাদ দেই না।আমাগোর রাস্তা না থাকলো কিন্তু মনোবল আছে। ছোটবেলায় থেইকা নামাজ পড়ি এহানে।কষ্ট লাগে অভাব দেখে।আমগোর তো টাকা নাই দিমু কোহান থেইকা।আমরা কষ্ট কইরা নৌকা পারাপার হমু।এতেই আমগোর শান্তি।নৌকা দিয়ে মুসুল্লি পারাপার করা ফারুক জানান,মাঝে মাঝে আমি মুসুল্লিদের নৌকা দিয়ে পার করে দেই।তাছাড়া যেভাবে পারে অন্যান্য নৌকা দিয়ে পার হয়ে মসজিদে যায়।
মসজিদের ইমাম মো. সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আমিসহ সকল মুসুল্লিদের এখানে আসতে হয়।বর্ষাকালে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ।পানির মধ্যে মসজিদ।তাই বেগ পোহাতে হয়।কিন্তু মুসুল্লিদের অদম্য ইচ্ছা থাকার কারনে মসজিদটিতে শত বাঁধা বিপত্তি স্বত্তেও নিয়মিত নামাজ হয়।মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল ইসলাম জানান,কোনো মসজিদে নৌকা দিয়ে গিয়ে নামাজ পড়ার কোনো দৃষ্টান্ত আছে বলে আমার মনে হয় না।এটি গরীবের মসজিদ হিসেবে পরিচিত।একটি স্থায়ী রাস্তা হলে সেখানে আর বন্যার পানি উঠত না।মুসুল্লিরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারতো।


সর্বশেষ সংবাদ
