প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২১, ২৩:৩৬
“ঈদের আগের লকডাউনে দুইদিন আর পরের লকডাউনে একদিন কাম পাইছি। হ্যারপর আর কোন কাম পাই নাই। আটজনের সংসারে উপার্জনক্ষম একমাত্র পোলা (ছেলে) আর মুই-ই আছি। পোলাডা (ছেলেটি) এ্যাকসিডিন (এ্যাক্সিডেন্ট) কইর্যা ঘরে পইর্যা আছে"।
"বউ কয় কাম পাওনা, রাস্তায় বইয়া থাইক্কা কি লাভ? গ্রামে যাইয়াও বা কি করমু? কাম পাওয়া আশায় রাস্তায় বইয়া থাহি”। কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল নগরীর মরকখোলা পুলের পাশে কোদাল নিয়ে বসে থাকা নাজির মহল্লার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা দিনমজুর মোহাম্মদ আলী।
মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি করেছে সরকার। একই সাথে অতি জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হচ্ছে।
এরপরও কাজ পেলে পরিবারের জন্য ডাল ভাতের যোগান দেয়া যাবে ভেবে রাস্তায় বসে থাকেন দিনমজুররা। তবে কাজ না পাওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। এমনকি এক বেলা খেলে আরেক বেলা খাবার যোগানোর সাধ্য নেই তাদের।
মোশারফ নামে কাশিপুর এলাকার এক দিনমজুর জানান, আটজনের পরিবারে তিনি একাই উপার্জনকারী। এই লকডাউনের মধ্যে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি। সহযোগীতা বলতে একদিন সন্ধ্যার পর গাড়িতে এসে রাস্তার পাশে বসে থাকায় এক পোটলা খিচুরি পেয়েছিলেন।
রাজাপুরের বাসিন্দা হাবিব। রাজমিস্ত্রির সহযোগি হিসেবে কাজ করেন। তবে বর্তমানে লকডাউনে সবধরণের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কেউ কাজে ডাকে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “অভাবের সংসারে আয় রোজগার না থাকায় প্রতিদিনই স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয়। কাজ না পেয়ে পরে লেবার সর্দারের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা অগ্রীম নিয়েছেন।
দিনমজুরদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, সরকার গরীব অসহায়দের জন্য বয়স্কভাতা দিলে স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিদের নিজস্ব লোকদের সেসব সুবিধা দেয়া হয়। এছাড়া অনেকেই নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা বা ভোটার না হওয়ায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
তারা আরো জানান, অনেক শিল্প কারখানার মালিক ও রাজনীতিবিদ তাদেরকে সাহায্য দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে কাজ করান। দিনশেষে পারিশ্রমিক দেয়ার সময় ফটো তুলে রাখেন।
তারা বলেন, “মোগো ফটো তুইল্যা আর লেইক্যা কি অইবে? এরহম অনেকেই কতা কইয়া গ্যাছে কিন্তু মোগো কফালে (কপালে) কিছু জোডেনাই (জুটেনি)। মোগো দুঃখ কেউ বোঝবে না। সামনে কি অইবে হেইয়াও জানিনা”!