প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২১, ১৮:৫২
মোর রিকসাত এলা কাইয়ো চইরবার চায় না বাহে। মুই বুড়া মানুষ, শরিলের শক্তি কমি গেইছে। জোড়ে রিকসা চালবার পারোং না তাই মোর রিকসা কাইয়ো চইরবারে চায় না। সগাই সবল রিকসাওয়ালা খোঁজে বাহে!একরাশ হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দেওয়ানের খামার গ্রামের বৃদ্ধ রিকসা চালক আনিছুর রহমান।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আনিছুর রহমানের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১০ ডিসেম্বর। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৮৪ বছর। বয়সের ভারে কুচকে গেছে শরীরের চামড়া। চুল ও দাড়ি সব সাদা হয়ে গেছে। কুচকানো শরীরের রগগুলোও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। তবুও বয়স্ক এই মানুষটি জীবন সংগ্রামে পরাজয় মেনে নিতে নারাজ।
যে বয়সে মানুষ অবসর সময় কাটায় সেই বয়সে তিনি রিকসা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। রিচার্জেবল ব্যাটারি চালিত বাহারি রঙের অটো রিকসার ভীড়ে সেকেলে হয়ে পড়া প্যাডেল চালিত রিকসা চালান আনিছুর রহমান।
অনেকেই তার রিকসায় উঠতে চান না। কেননা বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়া বৃদ্ধ পা দিয়ে রিকসার প্যাডেল ঘুরিয়ে যাত্রীদের দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌছে দিতে পারেন না। সময় বাঁচাতে প্রায় সকলই ব্যাটারি চালিত অটো রিকসায় চড়েন। বয়সের কাছে হার না মানলেও প্রযুক্তির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি।
সোমবার দুপুরে কথা হয় আনিছুর রহমানের সাথে। কত টাকা রোজগার হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান সকাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ২৫ টাকা রোজগার করতে পেরেছেন।
এই সামান্য টাকা দিয়ে কি হবে জানতে চাইলে উত্তর দেন রিজিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ আজ আমার রিজিকে যা রেখেছেন তাই পেয়েছি।
স্থানীয়রা জানায়, তিন মেয়ে আর এক ছেলের জনক আনিছুর রহমান জীবন-জীবিকার তাগিদে এখনো রিকসার প্যাডেল চেপে ছুটে চলেন নিরন্তর। সন্তানরা তার তেমন খোঁজ রাখেন না।
একদিন রিক্সা না চালালে ওইদিন তার বাড়িতে চুলা জ্বলে না। বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে বৃদ্ধ মানুষটির শরীরে। রিকসা চালিয়ে যে সামান্য আয় হয় তা জমিয়ে অসুস্থ্য স্ত্রীর চোখের অপারেশন করিয়েছেন।
আনিছুর রহমান জানান, একটা ব্যাটারি চালিত অটো রিকসা তার বিশেষ প্রয়োজন। কিন্তু কেনার মত আর্থিক সামর্থ্য তার নেই। সরকারি সুবিধা হিসেবে একটি বয়স্ক ভাতা কার্ড পেয়েছেন। বয়স্ক ভাতার টাকা দিয়ে ঔষধ কেনার টাকাও হয় না।
প্রতিবেশি স্কুল শিক্ষক আরিফুর জানান, আনিছুর রহমান নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। অত্যন্ত সৎ ও ভালো মানুষ। তার অবস্থা দেখে কষ্ট হয়। সমাজের বিত্তবানদের অসহায় মানুষটির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।
ভূরুঙ্গামারী সদর ইউপির সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মনোয়ারা খাতুন বলেন, যতটুকু পারি সরকারি সাহায্য প্রদানের চেষ্টা করি। কিন্তু তা দিয়ে একটি অটো রিকসা কেনা সম্ভব নয়।
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি ব্যাটারি চালিত অটো রিকসা কিনে দিতে পারলে ভালো হতো।