প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২১, ২২:১
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
নওগাঁর বদলগাছীতে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে স্লিপের বরাদ্দ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণে নামহীন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া ইনফ্রায়েড/নন-কন্টাক্ট থার্মোমিটার ক্রয়ে অনিয়ম করা হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে এমন অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোমলমতি শিশুদের জন্য এমন গুরুত্বপূর্ন একটি জায়গায় নামহীন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৩৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে স্লিপ থেকে ১২১ টি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা, ১১ টিতে ৭০ হাজার টাকা এবং ১টিতে ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
যা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার অর্ধেক পরিমাণ টাকা এসেছে। এ টাকা থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ হিসেবে- স্থায়ী ইনফ্রায়েড/নন-কন্টাক্ট থার্মোমিটার, স্প্রে মেশিন, ব্লিচিং পাউডার, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, জগ, মগ ও বালতি সহ অন্যান্য সামগ্রি ক্রয় করা হবে।
গত বছরের ১৭ মার্চ বন্ধ হওয়া স্কুলগুলো আগামী ৩০ মার্চ চালু করা হবে বলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
রাজশাহীর ‘মার্চইডুকিট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ‘কে৯ প্রো ইন্টিলিজেন্ট সেনসর সোয়াপ ডিস্পেন্সার’ মেশিন এবং ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ সরবরাহ করছেন। প্রতিটি মেশিনের মূল্য ধরা হয়েছে ৭ হাজার টাকা এবং ২ হাজার মিলি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর দাম ধরা হয়েছে ১২শ টাকা।
সরেজমিনে বদলগাছীর মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়- ওই প্রতিষ্ঠান একটি মাইক্রোবাসে করে সরঞ্জাম নিয়ে এসে শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া মেশিনটির কার্যক্রম বিষয়ে শিক্ষকদের ধারনা দেয়া হচ্ছে। দুই ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে।
বোতলের মোড়কের গায়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর নাম লিখা থাকলেও কোম্পানির কোন নাম লিখা নাই। অর্থ্যাৎ নামহীন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ৫০০ মিলির বোতল ২৮০ টাকা মূল্য লিখা থাকলেও ২৫০ মিলি বোতলে কোন মূল্য লিখা নাই। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে মেশিন এবং ২ হাজার মিলি করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনা হচ্ছে। নামহীন এই কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৫০০ মিলির বোতলের দাম ২৮০ টাকা হিসেবে ২ হাজার মিলির মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ১২০ টাকা।
সেখানে শিক্ষকরা কিনছেন ১২শ টাকায়। এছাড়া অনলাইন শপিং মার্কেট ‘দারাজ’ এ ওই একই রকম মেশিনের দাম ৪ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৬ হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নামহীন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার কোমলমতি শিশুদের জন্য অনেকটা ঝুঁকিপূর্ন। নামহীন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মেশিন বাজার থেকে তুলনামুলক বেশি দাম দিয়ে কেনা অনেকটা অস্বচ্ছতা দেখা দিয়েছে।
রাজশাহীর ‘মার্চইডুকিট’ প্রতিষ্ঠানের ডিস্ট্রিক কো-অর্ডিনেটর মাহমুদ হোসেন মাসুদ বলেন, শিক্ষকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। পরে আমার সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মোমিটার দেয়ার চুক্তি হয়।
আমরা ঢাকা থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বড় বড় ড্রাম কিনে পরে ছোট ছোট বোতলজাত করেছি। তবে এ হ্যান্ড স্যানিটাইজার কতটা নিরাপদ তার উত্তর তিনি দিতে পারেনি। এছাড়া থার্মোমিটার মেশিনের দাম বাজার থেকে বেশি নেয়ার বিষয়ে বলেন- আমরা ব্যবসা করি, কিছুটা তো লাভ করতেই হয়। এছাড়া এক বছরের ওয়ারেন্টি দেয়া হচ্ছে।
উপজেলার প্রধানকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা, বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ ও রামশাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আরা বেগম বলেন, শুনলাম এ মাসেই বিদ্যালয় চালু করা হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্লিপের বরাদ্দ থেকে আমরা এসব মালামাল কিনছি। কয়েকটা কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তবে এ কোম্পানি অনেকটা সাশ্রয় মনে হয়েছে। বাঁকী মালামাল পরে কিনবো।
বদলগাছী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফজলুর রহমান বলেন, এ বছর স্লিপের বরাদ্দ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার মালামাল কিনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে অবশ্যই থার্মোমিটার মেশিন মানসম্পন্ন ও স্থায়ী হতে হবে। পন্যের ব্যাপারে যদি কেউ অভিযোগ করে নামহীন ও মানহীন কোন আপোষ করবো না। ছোট বাচ্চাদের বিষয়ে কোন ছাড় দিবো না। এখানো অনেক জীবন জড়িত রয়েছে। তবে চুক্তিবদ্ধ ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোন যোগসাজস নেই বলে তিনি দাবী করেন।