হিলিতে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি, দুশ্চিন্তায় বর্গাচাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৫শে নভেম্বর ২০২২ ০৫:০৩ অপরাহ্ন
হিলিতে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি, দুশ্চিন্তায় বর্গাচাষিরা

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হিলিতে চলতি মৌসুমে আমন ধান কাটা মাড়াই পুরোদমে শুরু হয়েছে। বর্তমানে কাটা হচ্ছে স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা জাতের ধান। চাষিরা বলছেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি বেশি। গত বছরের তুলনায় ধানের দাম অনেকটা সন্তোষ জনক।তবে এবারে উৎপাদন খরচ বেশি।আর এসব কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বর্গাচাষিরা।


শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) হিলির হাট বিভিন্ন গ্রাম ও ধানের বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তিনটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভা নিয়ে হাকিমপুর হিলি উপজেলা গঠিত। 


হিলি পৌর সভার মধ্যবাসুদেবপুর গ্রামের কুষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি নিজের ৫ বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান চাষ করেছি। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) ধান লাগনো থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত খরচ পড়েছে প্রায় ১৩-১৪ হাজার টাকা। প্রতিবিঘায় ধান হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ মন পর্যন্ত। এবারে ধানের দাম একটু সন্তোষ জনক থাকায় নিজের জমি তাই একটু ভালো আছি। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা। 


উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের কোকতাড়া গ্রামের বর্গাচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি গরীব মানুষ নিজের জমিজমা নাই। তাই অন্যর বর্গা হিসেবে অগ্রীম টাকা দিয়ে দুই বিঘা জমি নিয়েছি। বর্ষা মৌসুমে সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে জমিতে পানি সেচ, সার ও কীটনাশক এর দাম বেশি হওয়ায় এবারে জমিতে আমন ধান চাষে খরচ বেশি হয়েছে। ধান কাটা মাড়াই শেষে হিসেব নিকেশ করলে দেখা যাবে আমার মতো বর্গাচাষীদের শুধু কড়টা লাভ হয়েছে। 


উপজেলার খট্রামাধবপাড়া গ্রামের জমি বর্গাচাষি রেজওয়ান আহম্মেদ বলেন, আমি প্রতিবিঘা (৩৩ শতক) জমি ৯-১০ হাজার টাকায় বর্গা নিয়েছি। ৩ বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা জাতের ধান আবাদ করেছি। বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত আকাশের বৃষ্টি না হওয়ায় গভীর নলকূপ থেকে জমিতে পানি সেচ দিতে গিয়ে এবারে খরচ আরও বেশি হয়েছে। জমির দামসহ ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটামাড়াই পর্যন্ত খরচ পড়েছে ২৩-২৪ হাজার টাকা। প্রতিবিঘায় ধান হচ্ছে গড়ে ১৬-১৭ মন। 


তিনি আরও বলেন, প্রতিকেজিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে ৩৬ টাকা। আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা কেজি। এতে প্রতিকেজিতে লোকসান গুনতে হবে ৪ টাকা। খড় বিক্রি করে সেই লোকসান কিছুটা পুষিয়ে যাবে। হয়তো সমান সমান হতে পারে। কোনো লাভ হবে না।


অন্যদিকে বোয়ালদাড় ইউনিয়নের কন্দরপুর গ্রামের কৃষক নওশাদ আলী বলেন, গেলো বছর জমিতে ধান চাষে লাভ হয়েছিল। এবার হচ্ছে না। কারণ জমিতে পানি সেচ, শ্রমিকদের মজুরি বেশি, সার ও কীটনাশকের দাম বেশি। তাই খরচও একটু বেশি হয়েছে। তাই এবার সবশেষে হিসেবে নিকেশ করলে দেখা গত বছরের তুলনায় এবারে লাভ কম হবে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া কৃষি সামগ্রীর দাম গেলো বছরের চেয়ে বেশি। তাই লোকসান গুনতে হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। 


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, চলতি মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৩ ইউনিয়নে ৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। প্রতিবিঘায় ১৬ থেকে ১৭ ধান ফলন হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।