হিটশকে ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৪২ কোটি টাকার প্রণোদনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: রবিবার ১৮ই এপ্রিল ২০২১ ০৪:৩১ অপরাহ্ন
হিটশকে ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৪২ কোটি টাকার প্রণোদনা

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশজুড়ে হিটশকে (গরম বাতাসে) ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য সরকার ইতোমধ্যে ৪২ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ এবং সহায়তা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।


একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে কৃষকদের এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি না হতে হয় সেজন্য উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল এবং রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনের বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।


১৮ এপ্রিল রোববার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণা মাঠ পরিদর্শনের সময় এসব কথা বলেন তিনি। অনেকটা আকস্মিকভাবেই কৃষিমন্ত্রী ব্রির গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করেন।


সম্প্রতি দেশজুড়ে উচ্চ তাপমাত্রা বা হিটশকে ধানের ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চতাপ সহনশীল ধানের জাত এবং গবেষণার অগ্রগতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন তিনি।


গত ৪ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরো ধানসহ ছয়টি ফসলের জমির ওপর দিয়ে হঠাৎ বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে (হিটশক) তিন লাখেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৩৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ফসল পুড়েছে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


সেখানে দীর্ঘ সময় তিনি ব্রির গবেষণা মাঠে উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল ধানের গবেষণা প্লটসহ ব্লাস্ট ও বিএলবি প্রতিরোধী ধানের অগ্রগামী জাত, ব্রি উদ্ভাবিত বাসমতি টাইপ ধান, হাইব্রিড ধানের গবেষণা এবং ব্ল্যাক রাইসসহ বিভিন্ন উন্নত গুণসম্পন্ন জাতের প্লটসমূহ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর মন্ত্রীকে বিভিন্ন গবেষণা প্লট সম্পর্কে ব্রিফ করেন।


পরিদর্শনকালে কৃষিমন্ত্রী সুপার হাইব্রিড ইউএস ৮৮ (টঝ-৮৮) এবং ব্রি উদ্ভাবিত বোরো মওসুমের ব্রি হাইব্রিড ধান-৩, ব্রি হাইব্রিড ধান-৫, ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ (প্রস্তাবিত) এবং বহুল প্রচলিত হাইব্রিড ঝখ-৮ এবং তেজ গোল্ডের ফলনের তুলনামূলক পরীক্ষণ এবং ব্রি হাইব্রিড ধান-৫-এর বীজ উৎপাদন প্লট পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি খাদ্য নিরাপত্তায় ব্রির বিজ্ঞানীদের প্রস্তুতি ও গবেষণা অগ্রগতি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং বিজ্ঞানীদেরকে অভিনন্দন জানান।


এ সময় বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. কৃষ্ণপদ হালদার, পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আবু বকর ছিদ্দিক এবং বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।


বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বুঝতে পেরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৩ সাল থেকে উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের গবেষণা শুরু করে। উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু এন২২ (ঘ২২) জাতের সঙ্গে বোরো মওসুমের জনপ্রিয় আধুনিক জাত ব্রি ধান-২৮-এর সংকরায়ন করে মার্কার এসিসটেড ব্যাকক্রসিং পদ্ধতির মাধ্যমে একটি অগ্রগামী সারি নির্বাচন করেছে, যা মধ্যম মাত্রার উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল।


এ সারিটি বর্তমানে আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষণ পর্যায়ে রয়েছে। ফলন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হলে এটিকে জাত হিসেবে অনুমোদনের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করা হবে। জাত হিসেবে অনুমোদিত হলে ফুল ফোটা পর্যায়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেও এ সারিটি আশানুরূপ ফলন দিতে পারবে।


#ইনিউজ৭১/জিয়া/২০২১