বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করলেন গুতেরেস

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: শনিবার ১৫ই মার্চ ২০২৫ ১২:৩৪ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করলেন গুতেরেস

বাংলাদেশের যেকোনো সংকটে জাতিসংঘ পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি চলমান সংস্কার কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেছেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সংস্কার প্রক্রিয়াগুলোকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। জাতিসংঘ সব সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত হয়েছে।  


জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মন্তব্য এমন সময় এলো যখন দেশটি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানবাধিকার ইস্যু এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের মতো বিষয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘ মনে করে, দেশটিতে গণতন্ত্রের বিকাশ এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশ যে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। তবে এই কার্যক্রম আরও বিস্তৃত ও কার্যকরভাবে পরিচালনার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।  


বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে এবং বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, শরণার্থী সংকট এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সচেতন করতে সহায়তা করেছে। গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।  


তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সকল পক্ষকে সমঝোতার পথে এগোতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হলেও নানাবিধ সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। জাতিসংঘ চায়, বাংলাদেশ তার গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার সংক্রান্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আরও অগ্রসর হোক। সংস্থাটি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।  


জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যের পর বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি রয়েছে। জাতিসংঘের এই অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে দেশটির নীতি-নির্ধারকদের সংস্কার কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।  


বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে এবং জাতিসংঘের সহযোগিতায় উন্নয়ন প্রকল্পও পরিচালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের প্রশংসা সরকারের জন্য ইতিবাচক বার্তা হলেও, দেশকে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দিকে এগোতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সুশাসন নিশ্চিত করাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।  


জাতিসংঘের এ আশ্বাস বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশটি তার চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। জাতিসংঘের সহায়তা বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।  


গুতেরেসের বক্তব্য স্পষ্ট করেছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে। ভবিষ্যতে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এখন এটি বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করছে যে, তারা এই সুযোগকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে তোলে।