সংবিধান সংস্কার কমিশন দেশের সংবিধানে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ' পরিবর্তন করে 'জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ' এবং প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে 'নাগরিকতন্ত্র' করার প্রস্তাব করেছে। বুধবার অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। সংবিধানের বিদ্যমান প্রস্তাবনা অনুযায়ী 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান' হিসেবে উল্লেখ থাকলেও নতুন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘জনগণের সম্মতি নিয়ে আমরা এই সংবিধান জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করছি।’
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংবিধানের সব ক্ষেত্রে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দের পরিবর্তে 'জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ' এবং 'প্রজাতন্ত্র' শব্দের পরিবর্তে 'নাগরিকতন্ত্র' ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ইংরেজি সংস্করণে 'পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ' ও 'রিপাবলিক' শব্দগুলো অপরিবর্তিত রাখা হবে।
এছাড়া নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সুপারিশ করেছে কমিশন। বর্তমানে সংবিধানে উল্লেখিত 'বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি' বিধান বিলুপ্ত করে নতুনভাবে ‘বাংলাদেশি’ শব্দ ব্যবহারের প্রস্তাব আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত অনুচ্ছেদ ৬(২) অনুযায়ী বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলে পরিচিত হবেন।’
এই সংস্কারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কমিশন বলছে, এটি বর্তমান সংবিধানকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে করা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা বলেছে, সংবিধানের কিছু ভাষা ও কাঠামোগত দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি আরও আধুনিক করা হবে।
কমিশনের সুপারিশের আলোকে বিশেষজ্ঞ মহল ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে জনগণের মতামতও সংগ্রহ করা হবে। সরকার একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চায়।
এদিকে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। অন্যদিকে, অনেকেই এটিকে সময়োপযোগী সংস্কার হিসেবে দেখছেন। সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে আরও সময় লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে দেশের আইনি কাঠামো ও নাগরিকত্বের ধারণায় বড় পরিবর্তন আসবে। সরকার এই সংস্কারের জন্য আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা আরও তীব্র হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।