কোরবানির সময় এলে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পশু আনা-নেওয়া করা হয়। শুধু কোরবানির সময়ই নয় বরং অন্যান্য সময়ও গরু, মহিষ কিংবা ছাগলের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। আবার ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতে এসব পশু মোটা-তাজা করার ক্ষেত্রে মেডিসিন প্রয়োগ করা হয়; যা পশুর জন্য কষ্টের কারণ। এর কোনোটিই পশুর সঙ্গে করা উচিত নয়। এগুলো গুনাহের কারণ।
কেউ কেউ জবাইয়ের সময় পশুকে কষ্ট দিয়ে থাকেন। জবাইয়ের জন্য পশু শোয়াতে গিয়ে কষ্ট দিয়ে থাকেন। পশু জবাইয়ের পর কাটা স্থানে ধারালো ছুরির মাথা দিয়ে খোঁচাতে থাকেন। পশুর সঙ্গে এমনটিও করা যাবে না। পশুর সঙ্গে যদি পশুসুলভ আচরণ করা হয় সেটিও গুনাহের কারণ।
পশুর প্রতি দয়ার আচরণ করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কোরবানির পশুর প্রতি সদয় হওয়া জরুরি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে পশুর প্রতি অমানবিক আচরণ করতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত শাদ্দাদ ইবনু আওস রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমি দুটি কথা মনে রেখেছি, তিনি বলেছেন-
إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের উপর ইহসান অত্যাবশ্যক করেছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে, দয়ার্দ্রতার সঙ্গে হত্যা করবে। আর যখন জবাই করবে তখন দয়ার সঙ্গে জবাই করবে। তোমাদের সবাই যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং তার জবাইকৃত জন্তুকে কষ্টে না ফেলে।’ (মুসলিম ১৯৫৫, নাসাঈ ৪৪১১, মেশকাত ৪০৭৩)
এ হাদিসে ওঠে এসেছে, যদি বিচারিকভাবে কাউকে হত্যা করতে হয়, কিংবা যুদ্ধের ময়দানে কাউকে হত্যা করতে হয়; সে সময়ও তার প্রতি দয়ার আচরণ করা। কম কষ্ট দিয়ে তাকে হত্যা করা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। আর যখন কোনো পশু জবাই করতে হবে, তাকেও বিনা প্রয়োজনে অতিরিক্ত কষ্ট দেওয়া যাবে না। যত কষ্ট কষ্ট দিয়ে সম্ভব পশু জবাই করা। সে কারণেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের পরবর্তী অংশে ছুরিকে ভালোভাবে ধার দিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। যাতে দ্রুত জবাই করা যায় এবং জবাইয়ের সময় পশুর কষ্ট কম হয়।
হাদিসের আলোকে কোরবানির সময় কিংবা সাধারণ সময়ে পশু পরিবহনের সময় কিছু চিত্র দেখা যায়, যা পশুর সঙ্গে একেবারেই অমানবিক আচরণ। শুধা অমানবিকই নয় বরং এটি অবৈধ এবং গুনাহের কাজ। সেটা কী?
অনেক সময় দেখা যায়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ট্রাকে কিংবা ট্রলারে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দীর্ঘ সময় তথা ২০-২২ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি সময় ধরে পশুকে দাঁড় করিয়ে আনা নেওয়া করা হয়। এসময় এমন পন্থা অবলম্বন করা হয় যাতে কোনোভাবে বসতে বা সুইতে না পারে সে জন্য দুই পায়ের মধ্য খানে বাঁশ বেঁধে দেয়। যা পশুর প্রতি খুবই অমানবিক আচরণ। এটি গর্হিত ও গুনাহের কাজ।
অনেক সময় এসব পশুর চোখ থেকে পানি পড়তে দেখা যায়। পশু কিছু বলতে পারে না। এটি অনুভব করতে হয়। তাই পশুর প্রতি কষ্ট নয় বরং পশুর প্রতি মানবিক আচরণ করা সুন্নত ও সওয়াবে কাজ।
আবার অনেক সময় ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য পশুকে ট্যাবলেট, ইনজেকশন, লিকুইড মেডিসিন প্রয়োগ করা হয়। আবার ছাগল জাতীয় পশুকে মুখে নল বা পাইপ দিয়ে অতিরিক্ত পানি খাওয়ানো হয়। যাতে পশুর পেট ফুলে নাদুস-নুদুস হয়ে যায। এতে পশুর মারাত্মক কষ্ট হয়।
পশুর এসব আচরণ জঘন্য ও গুনাহের কাজ। তাই পশুর সঙ্গে এসব আচরণ পরিহার করতে হবে। চাই তা কোরবানির পশু হোক কিংবা অন্য পশুর হোক।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পশুর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। পশুর সঙ্গে সদয় আচরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।