নবী-রাসূলদের তাকওয়ার দাওয়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৪ঠা মে ২০২১ ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
নবী-রাসূলদের তাকওয়ার দাওয়াত

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা আল বাকারা-১৮৩) এ আয়াতে রোজার উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হলো তাকওয়া। তাকওয়া শব্দটি আরবি। এর অর্থ বিরত থাকা, আত্মরক্ষা, বেঁচে থাকা, পরিহার করা, বর্জন করা ইত্যাদি।



পরিভাষায় পরকালে ক্ষতিকর এমন সব কাজকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখাকে তাকওয়া বলা হয়। আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী রা: বলেছেন, ‘তাকওয়া হলো অল্পে তুষ্ট থাকা, কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা এবং সদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা। সার কথাÑ তাকওয়া হলো একটি সচেতনতা যা বান্দাকে প্রতি মুহূর্তে কোনটি উপকারী ও কোনটি ক্ষতিকর তা স্পষ্টভাবে করে জ্ঞাত করে।


নবী-রাসূলদের তাকওয়ার দাওয়াত : সব নবী-রাসূল তাদের উম্মতকে তাকওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। যেমন
১. হজরত নুহ আ:-এর দাওয়াত : তিনি শরিয়তের প্রথম নবী। তাঁর দাওয়াত প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন তাদের ভাই হজরত নুহ আ: বলেছেন, তোমরা কি আল্লাহভীতি অর্জন করবে না?’ (সূরা শুয়ারা-১০৬)
২. হজরত হুদ আ:-এর দাওয়াত : তার দাওয়াত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন তাদের ভাই হুদ বললেন, তোমরা কি পরহেজগারি অর্জন করবে না?’ (সূরা শুয়ারা-১২৪)
৩. হজরত সালেহ আ:-এর দাওয়াত : আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন তাদের ভাই হজরত সালেহ আ: বললেন, তোমরা কি আল্লাহভীতি অর্জন করবে না?’ (সূরা শুয়ারা-১৪২)
৪. হজরত লুত আ:-এর দাওয়াত : আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন তাদের ভাই লুত আ: (তাঁর কাওমকে) বললেন, তোমরা কি আল্লাহভীতি অর্জন করবে না?’ (সূরা শুয়ারা-১৬১)। ৫. হজরত শুয়াইব আ:-এর দাওয়াত : আল্লাহর বাণী, ‘স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন তাদের ভাই হজরত শোয়াইব আ: (তাঁর কাওমকে) বললেন, তোমরা কি পরহেজগারি অর্জন করবে না?’ (সূরা শুয়ারা-১৭৭)
৬. হজরত ইলিয়াস আ:-এর দাওয়াত : তাঁর দাওয়াত প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন তাদের ভাই হজরত ইলিয়াস আ: বললেন, তোমরা কি তাকওয়া অর্জন করবে না?’ (সূরা আস সাফফাত-১২৪)

৭. হজরত ইবরাহিম আ:-এর দাওয়াত : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন হজরত ইবরাহিম আ: বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাকে ভয় করো। (সূরা আনকাবুত-১৬) সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের উচিত নিজে তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়া এবং অপর ভাইকে তাকওয়ার দাওয়াত দেয়া।
তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা : তাকওয়াহীন জীবন মূল্যহীন। ফলে মুমিন জীবনে তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাকওয়া কেন প্রয়োজন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন
১. কুরআন থেকে হেদায়েত গ্রহণের জন্য : আল্লাহ তায়ালা বলেন, আলিফ-লাম-মিম। এটি সে-ই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শনকারী।’ (সূরা বাকারা-১)


২. গুনাহ মাফের জন্য : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করো, তবে তিনি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন, তোমাদের থেকে তোমাদের পাপকে দূর করে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন।’ (সূরা আনফাল-২৯) ৩. দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য : আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতিত জায়গা থেকে রিজিক প্রদান করবেন।’ (সূরা আত তালাক-২)


৪. কঠিন কাজকে সহজতর করার জন্য : আল্লাহর বাণী, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।’ (সূরা আত তালাক-৪)
৫. প্রভুর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য : কুরআনের বাণী, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাথে যারা মুত্তাকি ও সৎকর্মশীল।’ (সূরা নাহল-১২৮) ৬. আল্লাহর কাছে সম্মানিত হওয়ার জন্য : আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক মুত্তাকি।’ (সূরা হুজরাত-১৪) ৭. চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করার জন্য : আল্লাহর বলেন, ‘নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তারাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকিদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।’(আরাফ-১২৮)



৮. পরকালে মুক্তি লাভের জন্য : আল্লাহর বাণী, অতঃপর আমি মুত্তাকিদের উদ্ধার করব এবং জালেমদের সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেবো।’ (সূরা মরিয়ম-৭২) ৯. বরকতের দরজা উন্মুক্ত করার জন্য : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যদি গ্রামবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি আসমান এবং জমিনের সব বরকতগুলো তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতাম।’
১০. আল্লাহর ভালোবাসা লাভের জন্য : আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সূরা তাওবা-৪)



১১. সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করার তৌফিক লাভের জন্য : আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে তোমাদের ফায়সালা করে দেবেন।’ (সূরা আনফাল-২৯) ১২. আল্লাহর রহমত লাভের জন্য : আল্লাহ বলেন, আর আমার রহমত প্রতিটি বস্তুর ওপর পরিব্যাপ্তি। সুতরাং তা তাদের জন্য লিখে দেবো যারা ভয় রাখে, জাকাত দান করে এবং যারা আমার আয়াতগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখে।’ (সূরা আরাফ-১৫৬)
১৩. ক্ষতি থেকে মুক্তির জন্য : আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সবর করে, আল্লাহ এহেন সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।’ (সূরা ইউসুফ-৯০)



১৪. দ্বিগুণ সওয়াব লাভের জন্য : আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। তিনি নিজ অনুগ্রহের দ্বিগুণ অংশ তোমাদের প্রদান করবেন।’ (সূরা হাদিদ-২৮)
১৫. জান্নাত লাভের জন্য : আল্লাহ বলেন, ‘আর জান্নাত মুত্তাকিদের জন্য নিকটবর্তী করা হবে।’ (সূরা শুয়ারা-৯০)
১৬. বন্ধুত্ব ঠিক রাখার জন্য : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, বন্ধুবর্গ একে অপরের শত্রু হবে, তবে মুত্তাকিরা নয়।’ (সূরা জুখরুফ-৬৭)
১৭. জান্নাতে গৃহ লাভের জন্য : আল্লাহ বলেন, ‘আর পরকালের গৃহ আরো উত্তম। মুত্তাকিদের গৃহ কি চমৎকার?’ (সূরা আন নাহল-৩০)


১৮. জান্নাতে চাহিদামতো সব কিছু লাভের জন্য : আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘সর্বদা বসবাসের উদ্যান, তারা যাতে প্রবেশ করবে। এর পাদদেশে দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হয়। তাদের জন্য তাতে তাই রয়েছে, যা তারা চায়। এমনিভাবে আল্লাহ মুত্তাকিদের প্রতিদান দেবেন।’ (সূরা আন নাহল-৩১)
১৯. স্বীয় প্রভুর কাছে যোগ্য অবস্থান লাভের জন্য : আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুত্তাকিরা থাকবে জান্নাতে ও নির্ঝরিণীতে। যোগ্য আসনে, সর্বাধিপতি সম্রাটের সান্নিধ্যে।’ (সূরা কামার-৫৪)


তাকওয়া অর্জনের উপায় : তাকওয়া অর্জনের উপায় হলোÑ ইবাদত করা, আত্মাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, পাপাচার থেকে মুক্ত থাকা, রমজানের সিয়াম পালন করা, জিকির-আসকার করা, আল্লাহর কাছে দোয়া করা ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মাহে রমজানে তাকওয়া অর্জন করে নিজের জীবনকে ধন্য করার তৌফিক দান করুন। আমিন।



লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।