চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। ওই মাসেই জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন এ রাজনৈতিক সংগঠনটি। সম্প্রতি বন্যার কারণে প্রস্তুতি কিছুটা ব্যাহত হলেও সেপ্টেম্বর থেকে বাকী কাজ শুরু করা হবে। আগামী বছর (২০২০ সাল) বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। সম্মেলনের পাশাপাশি ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া মুজিব বর্ষ উদযাপনে প্রস্তুতি নিয়েও কাজ করবেন তারা। এর পরের বছর ২০২১ সাল উদযাপন করা হবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। এই সময়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও সম্মেলনের তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। প্রস্তুতির কারণে কিছু দিন পিছিয়ে নভেম্বরেও হতে পারে জাতীয় সম্মেলন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত এক দশক ধরে নির্ধারিত সময়েই সম্মেলন করে আসছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। দলটির সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। সে হিসাবে আগামী অক্টোবরের ২৩ তারিখে শেষ হচ্ছে তিন বছরের জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ। গত ৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় নির্ধারিত সময়ে দলের জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়। তৃণমুল পর্যায় থেকে এই সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ৮টি সাংগঠনিক টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এই টিমগুলোকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনসহ সাংগঠনিকভাবে তৃণমুলকে প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, সম্মেলনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক সফরের জন্য দলের ৮টি টিম গঠন করা হয়। ঈদুল ফিতরের আগেই দু’একটি জেলায় সফরেও যান নেতারা। কিন্তু রমজান মাসে সফর বন্ধ হয়ে যায়, যা এখনও পূর্ণাঙ্গরুপে শুরু হয়নি। এছাড়া প্রতিটি সম্মেলনের আগে তৃণমূল তথা ইউনিয়ন, থানা, জেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে এরপর কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। এবার হাতে গোনো দু’একটি থানা ছাড়া এখনও কোথাও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আগামী সেপ্টম্বরে কয়েকটি জেলায় সম্মেলন করার বিষয়ে আলোচনা করছেন দলটির নেতারা। এছাড়া কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোরও সম্মেলন করা হয়। আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শ্রমিক লীগের মধ্যেও কোনও সম্মেলন প্রস্তুতি নেই।
এছাড়া এখন সারাদেশে বন্যা এবং রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বন্যা মোকাবেলা ও ত্রাণ বিতরণের কাজ করছেন। সেদিক থেকেও সাংগঠনিক কার্যক্রম আপাতত শিথিল। এদিকে সম্মেলন করার আগে জরুরি বিষয় হলো সদস্য সংগ্রহ অভিযান। এতে নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং পুরনো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও সেভাবে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। এছাড়া গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রতি সম্মেলনের আগে হালনাগাদ করা হয়। এবার এখনও এ সংক্রান্ত কোনও আলোচনা বা উদ্যোগ দেখা যায়নি। আর সম্মেলনের আবশ্যিক প্রস্তুতি কাউন্সিলর তালিকা তৈরি, মঞ্চ সাজানো, বিভিন্ন প্রকাশনা বের করার কাজ তো থাকছেই।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, সম্মেলনের জন্য খুব সীমিত আকারে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। যদিও এই মাসে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সম্মেলন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। সম্মেলনের আগে বেশ কিছু কাজ থাকে। সেগুলো এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ এতো শক্তিশালী সংগঠন যে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অক্টোবরেই সম্মেলন করা হবে, তাহলে সেটা সম্ভব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় নিয়মিত। তার ধারাবাহিকতায় এবারও সম্মেলন হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমি জেনেছি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দলের জাতীয় সম্মেলনের কথা ভাবছেন। তবে কখন হবে তা নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে সম্মেলনের ব্যাপারে আলোচনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।